স্বর্ণযুগের অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee)। ‘পাশের বাড়ি’র হাত ধরে বাংলা সিনেজগতে (Tollywood) পা রেখেছিলেন তিনি। প্রথম ছবিতে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০০ টাকা। তখন থেকে শুরু হয় অভিনেত্রী হিসেবে সফর। আস্তে আস্তে গোটা সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। ১০ বোন, মা, বাবা, ঠাকুমা… ছোট বয়সেই সবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাবিত্রীদেবী। আজ ৮৬ বছর বয়সে এসে একাকী দিনযাপন করেন তিনি।
এই বয়সে এসে যেখানে সাধারণত সবাই বিশ্রাম নেয়, সেখানে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এখনও নিয়ম মেনে শিল্পের দেবী সরস্বতী (Saraswati Puja) ও ধনের দেবী লক্ষ্মীর (Laxmi Puja) আরাধনা করেন তিনি। বয়স হলেও বাড়ির পুজো বন্ধ করেননি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। সম্প্রতি সরস্বতী পুজোর আগে জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় সরস্বতী পুজোর নানান স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
সাবিত্রীদেবী জানান, তাঁর কাছে সরস্বতী পুজো মানে শুধুই পুজো। অভিনেত্রীর কথায়, ‘প্রেমের কোনও নির্দিষ্ট দিন হয় নাকি, ওটা তো চিরকালীন। লোকের যত বাড়াবাড়ি এই দিনটাকে ঘিরে। আমার কাছে সরস্বতী পুজো মানেই শুধুমাত্র বাগদেবীর আরাধনা। আমি শুরু থেকেই নিজের বাড়িতে ঘটা করে এই পুজো করে এসেছি। মাঝে কিছু দুর্ঘটনা ঘটায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম’।
আরও পড়ুনঃ ‘স্বামী’ বলে মানেন মনে-প্রাণে! উত্তম কুমার নয়, সাবিত্রী চ্যাটার্জীর আসল স্বামী কে জানেন?
এক বছর সরস্বতী পুজোর দিন নিজের বাবা শশধর চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন সাবিত্রীদেবী। পিতৃতুল্য জামাইবাবুও সরস্বতী পুজোর দিন প্রয়াত হয়েছিলেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার বাবা, জামাইবাবু সবাইকে মা সরস্বতী কেড়ে নিয়েছিলেন। তাই তাঁর প্রতি অভিমান করে আমি অনেকগুলো বছর পুজো করিনি। গত ৩-৪ বছর ধরে ফের করছি’।
সাক্ষাৎকারে সাবিত্রীদেবী জানান, তাঁর বাবার বুকে জল জমেছিল। সেই সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশেষ উন্নত ছিল না। তবুও প্রায় সব বড় ডাক্তার দেখিয়েছিলেন শশধরবাবু। বুকে জমা জল বের করতে গিয়েই এক বছর সরস্বতী পুজোর দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এই ঘটনার কয়েক বছর পর অভিনেত্রীর জামাইবাবু মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরস্বতী পুজোর দিন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্ট্রোক হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম…’! সম্বন্ধ এলেও কেন বিয়ে হয়নি সাবিত্রী-পরাণের? এতদিনে ফাঁস অজানা কাহিনী
সাবিত্রীদেবী জানান, একসময় তাঁদের বাড়ির সরস্বতী পুজোয় মহানায়ক উত্তম কুমার আসতেন। আগে যে বাড়ি সবসময় লোকজনে গমগম করতো, এখন সেখানে তিনি একা থাকেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাকে তো একাই সরস্বতী পুজো করতে হবে, কেউ নেই। গোটা বাড়িটায় ভূতের মতো থাকি। একা একা সরস্বতী পুজো করবো…। আমি এখন মাটিতে বসতে পারি না। চেয়ার-টেবিলে বসেই সরস্বতী পুজো করবো, তাতে যদি মা তুষ্ট হন’।