কথায় আছে ‘শিল্পীদের মৃত্যু হয় না,তাঁরা আজীবন জীবিত থাকেন তাঁদের কাজের মধ্যে দিয়ে’। বাংলার এমনই একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হলে মহানায়ক উত্তম কুমার (Mohanayok Uttam Kumar। যাঁকে নিয়ে আজও বাঙালির আবেগ কমেনি এক ফোঁটা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে প্রত্যেক বাঙালি বারবার সমৃদ্ধ হয়েছেন তাঁর অসামান্য অভিনয় গুণে। তাই উত্তম কুমার ছাড়া গোটা বাংলা সিনেমা জগৎটাই যেন এক কথায় অসম্পূর্ণ। বড়পর্দায় উত্তম কুমার যে ম্যাজিক তৈরি করে গিয়েছেন তার ধারে কাছে আজও পৌঁছাতে পারেনননি বাংলার কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী।
তাঁর সুদর্শন চেহারা, ভুবন ভোলানো হাসি, মাদকতায় ভরা দুই গভীর চোখের চাহনি কিংবা কপালের ওপর বারবার এসে পড়া ওই অবাধ্য চুলের লুটোপুটি দেখেই কুপোকাত হয়েছেন মহানায়কের অগণিত মহিলা অনুরাগী। তাই উত্তম কুমারকে নিয়ে আজও বাঙালির পাগলামির অন্ত নেই। এতদিনে অনেকেই নিশ্চই জানেন তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল অরুণ কুমার। কিন্তু অভিনয়ে আসার পর সেই নাম বদলে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির উত্তম কুমার।
অভিনয় তো বটেই পাশাপাশি আরও একাধিক বিষয়ে ছিল মহানায়কের গভীর পর্যবেক্ষণ। তবে দুঃখের বিষয় একটাই সারা জীবন একাধিক ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকলেও আজীবন কাটাছেঁড়া করা হয়েছে শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই। যার ফলে অগোচরেই থেকে গিয়েছে মহানায়কের করা ভালো কাজগুলি। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, সে সময় নাকি অনেক মানুষের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন উত্তম কুমার।
যদিও সবটাই তিনি করতেন লোকচক্ষুর আড়ালে চুপিসারে। আর যাদেরকে তিনি সাহায্য করতে তাদেরকেও বলে রাখতেন সে কথা যেন কাউকে না না জানানো হয়। উত্তম কুমারের করা আর্থিক সাহায্যে সে সময় নাকি দায়ভার মুক্ত হয়েছিলেন বহু কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। তেমনি একবার ‘যদুবংশ’ সিনেমার শুটিং করছিলেন মহানায়ক। সেই সময় একদিন শুটিংয়ের একটি শটে উত্তম কুমার লক্ষ্য করেন সেটের উপর একটা আলো জ্বলেনি।
আরও পড়ুন:একি ধ্যাষ্টামো! রুচি ভেবে বাবাকে লাভ ইউ বলতেই রামধোলাই, টিভির আগেই ফাঁস দমফাটা হাসির পর্ব
সেই আলো জ্বালানোর দায়িত্ব ছিল লাইট ম্যান কালির ওপর। কিন্তু দূর থেকেই মহানায়ক লক্ষ্য করেন সেই কালীবাবু ঐদিন বেশ উদাসীন ছিলেন। তাই শুটিং শেষ হওয়ার পর স্বয়ং উত্তম কিমার তাঁকে নিজের মেক-আপ রুমে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন। এরপর তিনি কালীবাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর কি হয়েছে? তখন সেই লাইটম্যান নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি, কেঁদে ফেলেছিলেন মহানায়কের সামনেই।
সেইসাথে সেদিন লাইট ফেলতে ভুল হয়ে গিয়েছিল বলে মহানায়কের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। সেদিন উত্তম কুমারের মতো একজন বড় মাপের তারকা কালী বাবুর পিঠে হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এমনকি পরের দিন তাকে নিজের বাড়িতে ডেকে খামে করে তার মেয়ের বিয়ের পুরো টাকাটাই তুলে দিয়েছিলেন উত্তম কুমার। শোনা যায় শুধু কালী বাবু নন ইন্ডাস্ট্রিতে এমন বহু মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মহানায়ক।