যে কোনও সিনেমার একটি স্তম্ভ যদি নায়ক হয়, দ্বিতীয়টি অবশ্যই খলনায়ক। নায়ককে টেক্কা দেওয়ার মতো খলনায়ক না থাকলে সিনেমা দেখে মজা পান না দর্শকরা। অমরীশ পুরী, রঞ্জিত থেকে ড্যানি ডেনজোংপা- এমন বহু অভিনেতা আছেন যারা ভিলেন (Villain) হিসেবেই কাঁপিয়েছেন বড়পর্দা। আজকের প্রতিবেদনে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এমনই এক খলনায়কের কাহিনী তুলে ধরবো আমরা। যিনি নায়কদের থেকেও বেশি জনপ্রিয় ছিলেন এবং বেশি পারিশ্রমিক পেতেন।
আজ আমরা যে অভিনেতার গল্প আপনাদের শোনাবো তাঁর নাম হল প্রেম নাম মলহোত্রা (Prem Nath Malhotra)। ‘বাদল’, ‘জনি মেরা নাম’, ‘জানি দুশমন’র মতো একাধিক সুপারহিট সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ষাট-সত্তরের দশকের প্রায় প্রত্যেকটি হিন্দি ছবিতে (Bollywood) দেখা যেত তাঁকে। প্রেম নাথ না থাকলে সেই সিনেমা অসম্পূর্ণ মনে হতো বহু দর্শকের।
১৯২৬ সালে ২১ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে জন্ম প্রেম নাথের। দেশভাগের আগে জবলপুরে চলে আসে অভিনেতার পরিবার। তাঁর বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। তিনি চাইতেন, প্রেম নাথও পুলিশ অফিসার হোক। তবে পুলিশের চাকরিতে মনে বসেনি প্রেম নাথের। শেষমেষ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে মুম্বইয়ের উদ্দেশে পাড়ি দেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ বলিউডের সবচয়ে কম বাজেটের ব্লকবাস্টার হবে ‘ডানকি’! রিলিজের আগেই রেকর্ড ভাঙা শুরু করলেন শাহরুখ
মায়ানগরীতে এসে পৃথ্বীরাজ কাপুরের পৃথ্বী থিয়েটারে যোগ দেন প্রেম নাথ । এরপর ১৯৪৮ সালে ‘অজিত’ ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রাখেন তিনি। এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও সেই বছরই রিলিজ করে রাজ কাপুরের ‘আগ’। সেখানে প্রশংসিত হয় প্রেম নাথের অভিনয়। পরের বছর ‘বরসাত’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিটি হিট হওয়ার পর আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে।
প্রেম নাথে এমন একজন অভিনেতা ছিলেন যিনি সব ধরণের রোলে অভিনয় করতেন। নায়ক হোক বা ভিলেন- সবেতেই সমান দক্ষ ছিলেন তিনি। আসলে চরিত্র নয়, প্রেম নাথের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অভিনয় করা। একটা সময় তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে জামাইবাবু রাজ কাপুরের থেকে বেশি পারিশ্রমিক পেতেন তিনি। সেই সময় দাঁড়িয়ে প্রেম নাথের পারিশ্রমিক ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যেখানে রাজ কাপুর পেতেন ৭৫ হাজার, দিলীপ কুমার ৫০ হাজার এবং দেব আনন্দ ৩৫ হাজার টাকা করে পেতেন। অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্রর পারিশ্রমিকও সেই সময় অনেক কম ছিল।
আরও পড়ুনঃ আসছে বিরাট কোহলির বায়োপিক! বিশ্বকাপের সাফল্যের মাঝেই ‘সুখবর’ ফাঁস করলেন রণবীর
১৯৫৩ সালে ‘অউরাত’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় অভিনেত্রী বীণা রায়ের প্রেমে পড়েন প্রেম নাথ। এরপর দু’জনে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। বিয়ের পর দু’জনে একটি প্রযোজনা সংস্থা খোলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত প্রেম নাথ এবং বীণা প্রযোজিত সিনেমাগুলি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ফের অভিনয় জগতে কামব্যাক করেন অভিনেতা।
তবে একটা সময় বক্স অফিসে ব্যর্থ হতে থাকে প্রেম নাথের সব সিনেমা। সেই সময় মনের শান্তির খোঁজে কৈলাশ পাড়ি দেন তিনি। কিছু সময় সেখানে কাটিয়ে ফের মুম্বই ফিরে আসেন অভিনেতা। প্রেম নাথের ঝুলিতে ‘তেরে মেরে সপনে’, ‘তিসরি মঞ্জিল’, ‘বহারো কে সপনে’, ‘রোটি কপড়া অউর মকান’র মতো আইকনিক ছবি রয়েছে। অভিনেতাকে শেষ দেখা গিয়েছিল ‘হাম দোনো’ ছবিতে।