রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja)। এখন অবশ্য এই দিনটার পরিচিতি বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস ডে নামেই বেশি। তবে আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। আগে সরস্বতী পুজো মানে মন ভরে মায়ের আরাধনা, কুল খাওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া আরও কত কী! সম্প্রতি যেমন জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অনামিকা সাহা (Anamika Saha)। সেখানেই সরস্বতী পুজোর স্মৃতি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
টলিপাড়ার (Tollywood) ‘বিন্দুমাসি’ বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মের কাছে সরস্বতী পুজোর ফ্যাশান বলে কিছু ছিল না। তখন মায়ের শাড়ি গুটিয়ে পড়া, সেফটিপিন দিয়ে ব্লাউজ পরাতেই আমরা খুশি। বিশ্বাস করুন, ৭ দিন আগে থেকে চোখে ঘুম নেই। ঠাকুর দেখবো, পুজো দেব, অঞ্জলি দেব, মন দিয়ে মন্ত্র পড়তাম। সেই মন্ত্রটাও মুখস্থ থাকতো। একসঙ্গে সবাই মিলে যখন সেই মন্ত্র বলতাম, পুজো ঘর গমগম করতো’।
অনামিকা সাহার কথায়, তাঁদের সময় সরস্বতী পুজো মানে ছিল ছোট ছোট আবদার। এদিক থেকে কুল খাওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া যেত। তাই সেদিন নুন, লঙ্কা, চিনি দিয়ে কুল মেখে দিতেন মা, সেটাই আনন্দ সহকারে খেতেন। তাঁদের শেখানো হয়েছিল, মা সরস্বতীর কাছে একটু বসতে। মায়ের থেকে বিদ্যে, বুদ্ধি চাইতে। তবে এখনকার দিনে অবশ্য সেসব চল উঠে গিয়েছে বললেই চলে। অভিনেত্রীর কথায়, এখনকার ছেলেমেয়েরা ঘুরতে ঘুরতে মোবাইল ঘাঁটে, ইন্টারনেটের দিকেই সবসময় নজর থাকে তাঁদের।
আরও পড়ুনঃ ২৫ বছর বিবাহিত হয়েও কেন স্বামীর পদবি ব্যবহার করেন না ঋতুপর্ণা? এতদিনে ফাঁস হল রহস্য
সময়ের সঙ্গে বহু জিনিস বদলালেও, সরস্বতী পুজোর প্রেমটা কিন্তু এখনও রয়েছে। এই প্রসঙ্গে অনামিকা সাহা বলেন, ‘প্রেম হতো না এটা বলবো না। তবে তখনকার প্রেমে এত ঘন ঘন ব্যক্তি পাল্টাতো না। কেউ প্রেম করছেন, মানে করছেন। সরস্বতী পুজো মানেই কাউকে একটা ভালোলেগে গেল, এসবের চল তখনকার দিনে ছিল না’।
পর্দার ‘বিন্দুমাসি’ জানান, কর্মজীবনের পর সরস্বতী পুজো যেন আরও বিশেষ হয়ে উঠেছিল। এই দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বড় করে আয়োজন করা হতো, এখনও হয়। অনামিকা সাহা বলেন, ‘আগে আমরা একটাই বিল দিতাম, টেকনিশিয়ান স্টুডিওয়। সেখানে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। সে যে কী আনন্দ, সব শিল্পীরা সেদিন আসতেন। যারা শ্যুটিং করতে আসতেন তাঁরা যেমন সেদিন খেতেন, তেমনই যাঁদের শ্যুটিং থাকতো না তাঁরাও সময় করে চলে আসতেন। বেঞ্চ পেতে খাওয়ানো হতো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে সবাই মিলে হাত লাগাতেন’।
আরও পড়ুনঃ পর্দায় কুচুটে শাশুড়ি হলেও, বাস্তবে ছিলেন পুরো আলাদা! গীতা দের করুণ কাহিনী চোখে জল আনতে বাধ্য
সাক্ষাৎকারে কথার সূত্রে সরস্বতী পুজোর এক বিশেষ স্মৃতিও ভাগ করে নেন টলিপাড়ার এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। অনামিকা সাহা বলেন, ‘একবার আমার এক ছবির মহরৎ পড়েছিল সরস্বতী পুজোর দিন। সেই সিনেমায় ছিল বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সহ আরও অনেকে। সেদিন আমরা সবাই সেটে ছিলাম। তবে মজার বিষয় কী, আমার একটা দৃশ্য শ্যুট করে মহরৎ হবে বলে ঠিক করা হল। আর আমার সেই চরিত্রটা ছিল বেশ ঝাঁঝালো। মানে আমি যেমনটা করে থাকতাম’।
না থেমেই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলতে থাকেন, ‘আগে পুজো হল, খাওয়া দাওয়া হল। এরপর আমি মেকআপে বসলাম। কলটাইম ছিল ৫টা। আমার সংলাপ ছিল, ‘হারামজাদা, বুদ্ধি আক্কেল জীবনে হবে না? এমন একটা মেয়ের সঙ্গে তুই মিশছিস?’ আমি শট দিলাম, ‘ওকে’ হল। আমি এটা বুম্বার উদ্দেশে বলেছিলাম। শট হয়ে যাওয়ার পর বুম্বা আমায় বলল, ‘ছিঃ ছিঃ, অনামিকাদি, আজ সরস্বতী পুজোর দিন তুমি আমাকে এভাবে গালাগাল করলে? আমি না, সেই সময় ভেবেছিলাম, ও হয়তো সত্যিই মন থেকে বলছে। আমার ভীষণ কান্না পায়। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, ‘বাবা এটা আমি বলিনি তো, এটা তো ছবিতে ছিল, কেন তুমি আমায় ভুল বুঝছো?’ একথা বলে আমি কেঁদে ফেল। বুম্বা আজও আমায় সেই কথা শোনায়। এখনও দেখা হলে আমার নকল করে বলে, ‘এটা আমি বলিনি তো…’।