India Made History with Chandrayaan 3 Moon Landing : গত ১৪ জুলাই ঠিক দুপুর ২:৩৫ মিনিটে ইতিহাস গড়ার দিকে পা বাড়িয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। একরাশ আশা নিয়ে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে ‘চাঁদ মামা’র উদ্দেশে রওনা দেয় ইসরোর (ISRO) এই মহাকাশযান। গত ৪০ দিন প্রবল উৎকণ্ঠার পর অবশেষে বুধবার তথা ২৫ আগস্ট ইতিহাস গড়ল ভারত। আজ ঘড়ির কাঁটা ৬:০৪ ছুঁতেই ‘চাঁদের পাহাড়’ পৌঁছল (Moon Landing) ল্যান্ডার বিক্রম (Vikram)।
২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2) ব্যর্থতার পর ইসরোর ‘চাঁদের বাড়ি’ পৌঁছনোর স্বপ্ন একপ্রকার গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে শিবন। তবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা হার মানতে নারাজ ছিলেন। চন্দ্রযান-২’র ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান-৩’র হাত ধরে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তাঁরা। ব্যর্থতা ভুলে ফের নতুন করে পথচলা শুরু করে ইসরো।
চন্দ্রযান-১, চন্দ্রযান-২’র মতো চন্দ্রযান-৩-ও খুব ব্যয়বহুল প্রকল্প ছিল না। রাশিয়া কিংবা আমেরিকা চাঁদ যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেই তুলনায় খরচ অনেক কম ছিল। ভারতের চন্দ্রযান-৩-র বাজেট ছিল ৬১৫ কোটি টাকা। গত সাড়ে তিন বছরের পরিশ্রমের পর ইসরোর তরফ থেকে জানানো হয়, ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেবে চন্দ্রযান-৩।
আরও পড়ুনঃ কেটলির দামে কেনা যাবে গোটা চা বাগান, এই টি-পটের দাম শুনলে ভিরমি খান খোদ মুকেশ অম্বানি!
ইসরোর এই ঐতিহাসিক চন্দ্রযানের কেন্দ্রে ছিল এলভিএম-৩ রকেট। এই রকেটই শক্তি জোগান দিয়ে চন্দ্রযান-৩-কে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল। ত্রিস্তরীয় এই উৎক্ষেপণ যানটিকে ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ বলেও সম্বোধন করা হয়। সফল উৎক্ষেপণের পর আস্তে আস্তে ‘চাঁদ মামা’র দিকে এগোতে শুরু করে চন্দ্রযান-৩। ১৫ জুলাই পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথ পেরোয় এই মহাকাশযান। পঞ্চম কক্ষপথটি পেরিয়েছিল গত ২৫ জুলাই। এরপর ৩১ জুলাই পৃথিবীর কক্ষপথে ছেড়ে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয় চন্দ্রযান-৩।
আরও পড়ুনঃ এক টিকিটেই ১৪০টি দেশ ও ৭টি মহাদেশ ভ্রমণ! বিশ্বভ্রমণ করতে কত টাকা খরচ জানেন?
গত ৫ আগস্ট পৃথিবীর উপগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই মহাকাশযান। ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট- এই দিনগুলি প্রবল উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কারণ অঙ্কের সামান্য ভুলে চাঁদের কক্ষপথে যদি পৌঁছতে ব্যর্থ হতো চন্দ্রযান-৩, তাহলে আবার ঘুরে পৃথিবীর কক্ষপথে চলে আসতো। সেখান থেকে ফের চাঁদে পাঠানোর মতো জ্বালানি ছিল না। তাই সেক্ষেত্রে চন্দ্রযান-২’র মতো চন্দ্রযান-৩’ও ব্যর্থ হতো। কিন্তু এমনটা হয়নি। সকল বাধা কাটিতে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে এই মহাকাশযান।
এরপর চন্দ্রমার চারদিকে পাক খেতে খেতে নিজের গতি কমাতে শুরু করে চন্দ্রযান-৩। গত ৫ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত একটি একটি করে চাঁদের কক্ষপথ পেরোতে থাকে এটি। গত ৬ আগস্ট চাঁদের দ্বিতীয় কক্ষপথে প্রবেশ করে গন্তব্যের ছবিও তুলে ফেলে চন্দ্রযান-৩। সেখানে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল চন্দ্রপৃষ্ঠে থাকা গিরিখাতগুলিকে।
এরপর গত ১৭ আগস্ট চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায় চন্দ্রযান-৩। মূল মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে যায় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। অর্থাৎ শুরু হয়ে যান অবতরণের প্রক্রিয়া। রোভার প্রজ্ঞানকে পেটে নিয়ে আস্তে আস্তে ‘চাঁদের পাহাড়’এ নামতে শুরু করে বিক্রম। সেই সঙ্গেই চলতে থাকে চেদের দক্ষিণ মেরুর দুর্গম খানাখন্দে ভরা জমিতে অপেক্ষাকৃত মসৃণ এলাকার খোঁজ। অনেক খোঁজার পর অবশেষে উপযুক্ত জমি খুঁজে পায় ল্যান্ডারটি।
২৩ আগস্ট সেখানেই সফট ল্যান্ডিং করলো চন্দ্রযান-৩। সেই সঙ্গেই গড়ল ইতিহাস। ৪ বছর আগে এই ধাপে এসে ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২, আজ নির্বিঘ্নে অবতরণ করে ইতিহাস রচনা করলো চন্দ্রযান-৩। ফের একবার কান্নায় ভাসলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তবে এই কান্না ব্যর্থতার নয়, এই কান্না আনন্দের, এই কান্না তৃপ্তির।