“নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী”, রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের এই লাইনটি দিয়েই শুরু করা যাক জোম্যাটো গার্ল সঙ্গীতার গল্প। এই ‘পুরুষতান্ত্রিক ‘ মনোভাবাপন্ন সমাজের গালে সপাটে দুই চড় মেরে সঙ্গীতা বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘ছেলেদের কাজ’ এবং ‘মেয়েদের কাজ’ বলে আলাদা কিছুই হয়না, কাজ – কাজই হয়।
বেলঘরিয়া নিবাসী সঙ্গীতা সরকার, একজন নাট্যকর্মী, থিয়েটার ভালোবাসেন। তিনি শিক্ষিতাও। তার বাবা কলকাতা পুলিশে কর্মরত থাকায় তার পরিবারে আর্থিক টানাটানি নেই। তবুও সে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে জোম্যাটোতে খাবার ডেলিভারি কাজ। কারণ একটাই, করোনার জন্য কাজ বন্ধ প্রায় সমস্ত নাট্যকর্মীদের, অনেকের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাই বাইশ বছরের সঙ্গীতা এই কাজ করে উপার্জিত অর্থ থেকে নিজের হাত খরচ বাদ দিয়ে পুরো টাকাটাই তুলে দেন রুজিরুটিহীন নাট্যকর্মীদের হাতে।
হ্যাঁ, এই কাজ করতে গিয়ে সমাজের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে সঙ্গীতাকে৷ প্রশ্ন উঠেছে, “এত লেখাপড়া জেনে শেষে কিনা Zomato?” কিন্তু সঙ্গীতা এসবের কাছে মাথা না নুইয়ে এটুকু বয়সেই অনেক বড়ো দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। তার কাছে সৎ পথে উপার্জন করার কোনো কাজই ছোটো নয়, বরঞ্চ টেবিলের তলা থেকে হাত পেতে ঘুষ নেওয়ার চেয়ে শতগুণ সন্মান জনক।
এই প্রসঙ্গে জোম্যাটোর টিশার্ট গায়ে দিয়ে নিজের ছবি পোস্ট করে সগর্বে সঙ্গীতা লেখেন, “হ্যা আমি Zomato delivery এর কাজ করছি। আর সেই কাজে আমি গর্ব বোধ করি। So called elite socity তে যাদের আমাকে নিয়ে সমস্যা, যারা সর্বক্ষণ আমায় দেখলেই বলছেন “এত পড়াশোনা করে Zomato?” “তোর তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই তবে কেনো” “ওই হবে নাটক আর zomato” তাদের কে বলছি, থিয়েটার করি তো তাই, থিয়েটার থেকে যে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি সেটাই বলছি… আমার কাছে লোক না ঠকিয়ে যে পেশায় অর্থ উপার্জন করা যায় সেটাই সম্মানের। আর হ্যা আমরা খাবার ডেলিভারি করি, আন্ডার টেবিল টাকা নয়”।
স্কুটি নয় বাইক চালানোতেও সমান পারদর্শী সঙ্গীতা৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক নিয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগের দ্বিতীয় সেমেস্টারে পড়াশুনো করেছেন সঙ্গীতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেই একটি তহবিল গড়েছেন তিনি। সব ঠিক হলে বাইক নিয়েই পাহাড়ে পাড়ি দিতে চান জ্যোমাটো গার্ল।