একসময় বাংলা থেকে হিন্দি দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেছেন সমানতালে। নিজের অভিনয় গুণে জাত চিনিয়েছিয়েলন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ও করেছেন সেই সময়ের নামিদামি অভিনেতাদের বিপরীতে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) সঙ্গে জুটি বেঁধে করেছিলেন জনপ্রিয় ছবি ‘অমর সঙ্গী’ (Amar Sangi)। সেই ছবি আজও বাঙালি দর্শকদের কাছে ততটাই প্রিয়, যতটা সেই সময়ও ছিল।
“অমরসঙ্গী” সিনেমার গানগুলো আজও আমবাঙালির প্লে লিস্টে শোভা পায়। বলা বাহুল্য যে, এই সিনেমায় বিজয়েতা পণ্ডিতের (Vijayta Pandit) অভিনয় মন কেড়েছিল দর্শকমহলের। এমনকি বলিউডেও মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে জুটি বেঁধে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সুন্দরী অভিনেত্রী। তাঁকে পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকত সিনেমাপ্রেমীরা।
কিন্তু একটা সময় হঠাৎই ইন্ডাস্ট্রি থেকে একেবারে উধাও হয়ে যান অভিনেত্রী। তারপর থেকে আর কোনো নতুন ছবিতে তাকে দেখা যায়নি। আচমকা কেন এই বিরতি নিলেন? কেন তাকে আর কোন ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেল না? এই প্রশ্ন সকলের মনেই ঘোরাফেরা করে। অনুরাগীদের মধ্যে এক সময় কৌতুহল সৃষ্টি হয় তাঁর সুস্থতা নিয়ে।
জানা যায়, সুন্দরী এই অভিনেত্রীর জন্ম হরিয়ানার একটি রক্ষণশীল পরিবারে। চার ভাই বোনের সংসার। প্রত্যেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তবে অভিনেত্রীর আরেক পরিচয় তিনি পন্ডিত যশরাজের ভাইঝি। এছাড়াও বিজেয়েতা কেবল মাত্র একজন নায়িকাই ছিলেন না, সেই সঙ্গে একজন সুকণ্ঠী গায়িকাও ছিলেন বটে। দিদি সুলক্ষণা পণ্ডিতের সাথেই দীর্ঘদিন গানের জগতেও বিচরণ করেন তিনি।
বিজয়েতা ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার শুরু করে প্রযোজক রাজেন্দ্র কুমারের ‘লাভ স্টোরি’ ছবি দিয়ে। ছবিতে রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে কুমার গৌরব ছিল বিজয়েতার নায়ক। সেই সময় ছবিটি মুক্তির পরপরই ছবিটি সুপারহিট হয়। সুন্দরী বিজেয়েতার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায় দর্শকমহল। এদিকে সিনেমার সেটে প্রেমে পরে যান প্রযোজক রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে কুমার গৌরব।
কিন্তু তাদের সম্পর্কের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কুমার গৌরবের বাবা রাজেন্দ্র কুমার। তাঁদের সম্পর্কে শিলমোহর দেয়নি রাজেন্দ্র কুমার। এই ঘটনার জেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বিজয়েতা। ক্যারিয়ারেও কিছুটা প্রভাব পরে। তারপর আবার পুরোদমে কাজ করতে থাকেন। ১৯৮৫ সালে মহাব্বাত সিনেমা দারুন জনপ্রিয়তা পায়। এরপর জিতে হ্যায় শান সে’, ‘দিওয়ানা তেরে নাম কা’,‘পেয়ার কা তুফান’ এর মত একাধিক ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল।
এরপর টলিউডে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘অমরসঙ্গী’ ছবিতে অভিনয়। এই ছবির মাধ্যমে বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল বিজেয়েতার মুগ্ধতা। বাংলায় বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। এক কথায় বাঙালিদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সফলতার চূড়ান্ত শিকড়ে পৌঁছেও কেন হারিয়ে গেলেন এই অভিনেত্রী সেই নিয়ে দ্বন্দ্ব আজও।
কানাঘুষোয় জানা যায় কুমার গৌরবের সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদের পর বলিউডের আরেক পরিচালক সমীর মালকিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিয়েও করেন সেই পরিচালককে, কিন্তু সেই সম্পর্কও ভেঙে যায় মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই। এরপরেই নাকি তিনি অভিনয় জগৎ ছেড়ে পুরোপুরিভাবে গানই মনোনিবেশ করেন।
এসবের পর গানের জগতে এসেই খুঁজে পেয়েছিলেন নিজের প্রকৃত সুখ। সম্পর্কে জড়ান সংগীত পরিচালক ও সুরকার আদেশ শ্রীবাস্তবের। দুজনে বিয়েও করেন। বর্তমানে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুন্দর দিন কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী বিজয়েতা পণ্ডিত।