প্রভাত রায় পরিচালিত ‘লাঠি’ ছবিটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? বাংলা সিনেপ্রেমী মানুষদের কাছে একটি ইমোশন হল এই সিনেমা। আর যাকে ছাড়া এই ছবি অসম্পূর্ণ তিনি হলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় (Victor Banerjee)। টলিউডের (Tollywood) পাশাপাশি বলিউড, এমনকি হলিউডেও একসময় চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অভিনেতাদের মধ্যে একজন হলেন ভিক্টর। এত কৃতিত্ব অর্জন করলেও কেন এখন সিনেদুনিয়ায় সেভাবে দেখা যায় না তাঁকে?
১৯৭৭ সালে কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবির হাত ধরে সিনেদুনিয়ায় পা রাখেন ভিক্টর। প্রথম ছবিতেই নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচালকের মন জয় করে নেন তিনি। সেই সঙ্গেই সত্যজিৎ রায়ের পরবর্তী ছবি ‘ঘরে বাইরে’তেও কাজের সুযোগ পেয়ে যান অভিনেতা। এই সিনেমায় অভিনয় করে সেরা পার্শ্বচরিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার জেতেন ভিক্টর।
এরপর আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি ভিক্টরকে। বাংলার পাশাপাশি বিদেশের একাধিক ছবিতে কাজের সুযোগ আসতে থাকে তাঁর কাছে। ১৯৮৪ সালে ডেভিড লিন পরিচালিত ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই বাঙালি অভিনেতা। শুনলে গর্বিত হবেন, এই ছবিটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ১০টি পুরস্কার জিতেছিল। এর মধ্যে ২টি অস্কারও ছিল।
গোটা বিশ্বের সামনে পুরস্কৃত হয়েছিল বাঙালি অভিনেতা ভিক্টরের ছবি। এরপর অস্কারজয়ী পরিচালক ‘রোনাল্ড নেমি’র ‘ফরেন বডি’ ছবিতে কাজের সুযোগ পান অভিনেতা। তারপর ইংল্যান্ডের অপেরায় যীশুখ্রীষ্টের চরিত্রে অভিনয় করা থেকে শুরু করে ‘থিংকিং অফ হিম’ ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিসেবে হাজির হওয়া- একাধিক স্মরণীয় প্রোজেক্টে কাজ করেন ভিক্টর ব্যানার্জী।
নিজের তুখোড় অভিনয়ের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের একাধিক সম্মানীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ভিক্টর। ভারত সরকারের তরফ থেকে পদ্মভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। যে অভিনেতা নিজের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব জয় করেছেন, সেই মানুষটিকে টলিউড সেভাবে ব্যবহার করতে পারলো না! এই ব্যর্থতা ভিক্টর ব্যানার্জীর নয়, এই ব্যর্থতা বাঙালির, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির।