বাংলার স্বর্ণযুগের শিল্পীদের (Singer) নামের তালিকা যদি তৈরি করা হয় তাহলে ওপরের দিকেই নাম থাকবে আরতি মুখোপাধ্যায়ের (Aarti Mukherji)। তাঁর গাওয়া গানগুলি শুনলে এখনও মন ভালো হয়ে যায় সকলের। অবশ্য শুধুমাত্র টলিউডই (Tollywood) নয়, বলিউডেও (Bollywood) কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি গায়িকা। তবে শোনা যায়, সেখানে তাঁর গানের দক্ষতা দেখে অনেক শিল্পীই ভয় পেয়েছিলেন। এরপর নাকি তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। আর সেই কারণেই ফিরে আসতে হয় এই কিংবদন্তি গায়িকাকে।
আরতির গাওয়া সুপারহিট গানের তালিকায় নাম রয়েছে একাধিক আইকনিক গানের। ‘আমি মিস ক্যালকাটা’, ‘লাজে রাঙা হল কনে বউ গো’ থেকে শুরু করে ‘এক বৈশাখে দেখা হল দুজনার’-সহ প্রচুর গান গেয়েছেন তিনি। নিজের অসাধারণ সঙ্গীত দক্ষতার জন্য বাংলা থেকে প্রচুর সম্মানও পেয়েছেন আরতি। তবে বলিউড থেকে আরও অনেক বেশি সম্মান পাওয়া উচিত ছিল তাঁর। কিন্তু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হারিয়ে যান তিনি।
বাংলার এই কিংবদন্তি গায়িকা ছোট থেকেই গানের পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর মা, বাবা দু’জনেই ছিলেন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী। তবে ছোটবেলাতেই গায়িকা নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন। মায়ের থেকেই গান শেখা শুরু তাঁর। শোনা যায়, একবার পুজোর সময় আরতির দিদিমা তাঁকে জামা না কিনে দিয়ে তানপুরা উপহার দিয়েছিলেন। তখন থেকেই সঙ্গীত দুনিয়ায় তাঁর যাত্রা শুরু হয়।
‘আমি মিস ক্যালকাটা’ গায়িকা গান শিখেছিলেন সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। এরপর একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করার পর থেকে আরতির কেরিয়ার শুরু হয়। ‘মামলার ফল’ সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক গেয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে আর পিছন ঘুরে দেখতে হয়নি তাঁকে। ‘মহানায়িকা’ সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে সুপ্রিয়া দেবী হয়ে অপর্ণা সেন, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়- একাধিক নামী নায়িকার হয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
আরতি গীতিকার সুবীর হাজরার স্ত্রী ছিলেন। তবে গায়িকার প্রথম বিয়ে সুখের ছিল না। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করে তিনি মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলেদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন তিনি। তবে সেখানকার কেউই নাকি তাঁকে খোলামনে স্বাগত জানাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, খাবারে বিষ মিলিয়ে তাঁর গলাও নাকি নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
বলিউডে গিয়ে নিজের প্রতিভার জোরে একাধিক গানের সুযোগ পাচ্ছিলেন আরতি। তবে ‘উপর মহলের চাপে’র জন্য নাকি সেই সব সুযোগই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। গায়িকার ব্যক্তিগত জীবনের ওপর দিয়েও তখন নাকি ঝড় বইছে। প্রথম বিয়ে ভাঙার পর নিজের মায়ের অনুরোধে এক গুজরাটি ব্যক্তির সঙ্গে সাত পাক ঘুরেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বিয়েও সুখের ছিল না। এখন গানের দুনিয়া থেকে সরে গিয়ে পুত্র সোহমের সঙ্গে একা দিন কাটাচ্ছেন আরতি।