বাংলা সিনেপ্রেমী মানুষদের কাছে উত্তম কুমার (Uttam Kumar) শুধুমাত্র একজন অভিনেতা নন, তিনি হলেন বাঙালিদের গর্ব, আবেগ। প্রয়াণের এত বছর পরেও তাই দর্শকদের মনের মণিকোঠায় নিজের স্থান ধরে রেখেছেন ‘মহানায়ক’। অনেকেই আজও উত্তম কুমারের মৃত্যু (Uttam Kumar death) মেনে নিতে পারেননি। ১৯৮০ সালে ২৮ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
আইকনিক ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শ্যুটিং চলাকালীন সেটের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ‘মহানায়ক’। পরের দিনই জানা যায়, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনি। এই ছবিতে মহানায়কের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Moushumi Chatterjee), রঞ্জিত মল্লিক, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের মতো তারকারা। মৌসুমী সেই সময় বলিউডের নামী নায়িকা। পাশাপাশি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছেলের বৌ তিনি। তবে অনেকেই জানেন না, উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর এই মৌসুমীর দিকে আঙুল তুলেছিলেন সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi)।
সুপ্রিয়া বলেছিলেন, উত্তম কুমারের মৃত্যুর জন্য হয়তো মৌসুমী সরাসরি দায়ী নন। তনে অভিনেত্রীর দেওয়া এক আঘাত নাকি মেনে নিতে পারেননি কিংবদন্তি অভিনেতা। মহানায়কের অকাল মৃত্যুর জন্য সেই ঘটনাও অনেকটা দায়ী। শোনা যায়, বাকিদিনের মতো সেদিনও একসঙ্গে শ্যুট করছিলেন উত্তম কুমার এবং মৌসুমী। তবে অভিনেতার নিজের মেক আপ রুমে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই জন্য তাঁকে অন্য মেক আপ রুম ব্যবহার করার কথা বলা হয়।
অভিনেতা নাকি যখন অন্য একটি মেক আপ রুমে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন তাঁকে একজন বলেছিলেন, দাদা ভেতরে একজন বড় নায়িকা মেক আপ করছেন। এখন ঘরে ঢোকা যাবে না। তিনি কাউকে মেক আপ রুমে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। এই ‘বড় নায়িকা’ ছিলেন মৌসুমী। একথা শোনার পর নাকি কিছুটা থমকে গিয়েছিলেন মহানায়ক।
উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর শোকস্তব্ধ সুপ্রিয়া দেবী বলেছিলেন, নিজের স্টুডিও পাড়াতেই এভাবে মেক আপ রুমে না ঢুকতে পারার অপমান মানতে পারেনি উত্তম। তাও কিনা একজন জুনিয়র অভিনেত্রীর থেকে। এত স্পর্ধা! শেষ জীবনে আপনাদের দাদার এই প্রাপ্তি ছিল’। সুপ্রিয়া দেবীর এই বক্তব্যের কথা জানতে পেরে মৌসুমী সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমার কাছে উত্তম কুমার শুধু নায়ক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমার উত্তমকাকু। আমার শ্বশুরমশাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বন্ধু। আমায় ইন্দু বলে কত ভালোবাসতেন। আমি কেন তাঁকে মেক আপ রুম থেকে তাড়িয়ে দেব? আমার কাছে এমন কোনও খবর এসে পৌঁছয়নি যে উত্তমকাকু সেদিন আমার মেক আপ রুমে মেক আপ করতে এসেছিলেন। তাঁকে চলে যেতে বলার মতো সাহস অথবা স্পর্ধা কোনোটাই আমার নেই’। মৌসুমী ঠুকে আরও বলেন, ‘একজন মহিলা ‘আপনাদের দাদা’ বলে উত্তম কুমারকে নিজস্ব সম্পত্তি ভাবতেন। আমার নামে এসব কুকথা তিনিই রটিয়েছিলেন’।