বাংলা বিনোদন জগতের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন সুদীপা বসু (Sudipa Bosu)। দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনে তাঁকে দেখা গিয়েছে একাধিক জনপ্রিয় সব বাংলা সিরিয়ালে (Bengali Serial)। কিছুদিনআগেই তাঁকে দেখা গিয়েছে জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বোধিস্বত্বের বোধ বুদ্ধি’তে। এই সিরিয়ালে বধির দিদা হয়েছিলেন তিনি। তবে বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী হলেন মঞ্চের মানুষ। থিয়েটার তাঁকে বরাবরই টানে। একসময় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন মেঘনাথ ভট্টাচার্যের (Meghnath Bhattcahrya) ‘সায়ক’ নাট্যাদলে। এছাড়া আজও অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutta)-কেই নিজের গুরু বলে মনে করেন অভিনেত্রী।
কলেজে পড়ে সময়েই পাড়ার ক্লাবের নাটকে করতেন তিনি। এরপর অঞ্জন দত্তের একটা ওয়ার্কশপে গিয়েই বদলে যায় অভিনেত্রীর জীবন। অভিনয়ের বিরাট জগতের সাথে তিনিই পরিচয় করান সুদীপার। অঞ্জন দত্তের ‘পাতি প্রেমের গপ্পে’ অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সেখানে তিনি করেছিলেন মারিয়া চরিত্রটা। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল জোশ টকসের মঞ্চে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রী।
সেখানেই নিজের সম্পর্কে নানান অজানা কথা শেয়ার করেছেন এই বর্ষিয়ান অভিনেত্রী। সুদীপা জানান শৈবাল বসুর সাথে বিয়ের পর কলকাতার তাজ-বেঙ্গল হোটেলে মোটা মাইনের চাকরি করতেন তিনি। এরইমাঝে অঞ্জন দত্তের হাত ধরেই সুদিপার সাথে পরিচয় হয় বিশিষ্ট্য নাট্য ব্যক্তিত্ব মেঘনাথ ভট্টাচার্যের। তথাকথিত সুন্দরী না হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র নিজের অভিনয়ের জোরেই তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন ‘বাসভূমি’-তে। কিন্তু সময় তাঁকে মেঘনাদ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘এই নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করতে গেলে চাকরি ছাড়তে হবে।’
ততদিনে অভিনয়ের নেশাটা ঢুকে গিয়েছিল অভিনেত্রীর মধ্যেও। তাই মোটা মাইনের চাকরি ছাড়তেও সেসময় দুবার ভাবেননি অভিনেত্রী। তবে দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনে বড় পর্দা থেকে সেভাবে অভিনয়ের ডাক পাননি তিনি। তবে অভিনয় করেছেন ‘অরণ্যদেব’, ‘আগুন’, ‘ঘেঁটে ঘ’-এর মতো বেশ কিছু সিনেমায়। কিন্তু বরাবরই অত্যন্ত পজেটিভ ধারণার অধিকারী সুদীপা নিজের না পাওয়া গুলোর থেকে অনেক বেশি উদযাপন করেন নিজের পাওয়া গুলোকে।
তাই রবি ঘোষে কিংবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত কিংবদন্তি সব অভিনেতাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি। এদিন অভিনেত্রী জানিয়েছেন একসময় অঞ্জন দত্তের হাত ধরেই জীবনকে এবং শহর কলকাতাকে একটু আলাদাভাবেই চিনতে শিখেছিলেন তিনি। যা তার পরিবারের চিন্তাভাবনার থেকে ছিল শত যোজন দূরে।
তাই এমন একটা সময় ছিল যখন ছুটির দিনে তিনি মদ্যপান করতেন। এমনই একদিন মদ্যপান করে তিনি গিয়েছিলেন মেঘনাথ ভট্টাচার্যের নাটকের রিহার্সালে । অথচ সেখানকার প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন ভীষণ মার্জিত, রুচিশীল স্বভাবের। মদ্যপানের মতো বিষয়টিকে একেবারেই পছন্দ করতেন না তারা। আর সেখানেই সুদীপা মদ্যপ অবস্থায় যাওয়ায় তাকে নিয়ে প্রচন্ড অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সেই নাট্য দলের সদস্যরা।
সেই সময় তাকে মেঘনাথ ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেছিলেন ‘তুই মদ খেয়ে রিহার্সালে এসেছিস? উত্তরে সুদীপা হ্যাঁ বলায় তাকে বেশ ভালোভাবেই মেঘনাথ ভট্টাচার্য বলেছিলেন ‘এটা এখানে চলে না!’ একথা শুনেই একসময়ের বহেমিয়ান এই অভিনেত্রী এখন বেশ অনেকটাই ভীতু হয়েছেন জীবনে। মেঘনাথ ভট্টাচার্যের কাছ থেকেই তিনি শিখেছিলেন ডিসিপ্লিন শব্দটার অর্থ।