বাংলা বিনোদন জগতের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী (Actress) হলেন মল্লিকা ব্যানার্জি (Mallika Banerjee)। যে কোন সিরিয়ালের ক্ষেত্রেই নায়ক নায়িকাদের মতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন সিরিয়ালের পার্শ্ব চরিত্ররা। এমনই একাধিক পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে চলেছেন অভিনেত্রী মল্লিকা ব্যানার্জি।
ইদানিং এই অভিনেত্রীকে দেখা যাচ্ছে স্টার জলসার ‘সাহেবের চিঠি’ সিরিয়ালে। একটা সময় নাচই ছিল এই অভিনেত্রীর ধায় জ্ঞান। তাই নাচ দিয়েই বিনোদন দুনিয়ায় অভিষেক হয়েছিল তার। ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স সুপার মাম’-এ তার নাচের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রভু দেবা থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তী, শাহরুখ খান সকলেই। দেখতে দেখতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে তার অভিনয়ের বয়স হয়েছে বেশ কয়েক বছর।
শুরুটা হয়েছিল ‘সোহাগী সিঁদুর’ নামে একটি ধারাবাহিক দিয়ে। দীর্ঘদিনের এই পথ চলায় অভিনেত্রীর জীবনে এসেছেন অনেক ওঠা পড়া। দেখতে গেলে অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনটা সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সম্প্রতি ২৪ ঘন্টার সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকার বসেছিলেন সাহেবের চিঠির বিদীপ্তা।
জীবনে বিশ্বাস করে বহুবার ঠকেছেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি সে কথাই জানিয়েছেন তিনি। মল্লিকার কথায় ‘আমার জীবনের কথা শুনে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয় তাহলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব’। অভিনেত্রী জানিয়েছেন তার জীবনের প্রথম লড়াই টা শুরু হয় ক্লাস এইট থেকে। সেই সময় তার বাবা হঠাৎ করেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বেলুড়ের বাসিন্দা মল্লিকারা তিন বোন। তাই অভিনেত্রীর বাবার চিন্তা ছিল কি করে তিন মেয়ের বিয়ে দেবেন!
তাই সেই ছোট বয়স থেকেই টাকা রোজগার করতে সিনেমায় ব্যাকআপ ডান্সারের কাজ করা শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলায় খুব অল্প বয়সেই তিনি প্রেমে পড়েছিলেন একজন মানুষের। তাকে বিশ্বাস করে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মল্লিকা। বিবাহিত জীবনে খুব ছোট বয়সেই তার কোল আলো করে এসেছিল ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। এমন সময় একদিন সকালে তার বর এসে জানান ‘একজনকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করতে চাই. তোমার সঙ্গে থাকতে চাই না’।
সেই থেকে চলতে লাগলো অভিনেত্রী লড়াই। অভিনেত্রীর জীবনে তার প্রথম বড় ব্রেক আসে ‘সোহাগ সিঁদুর’ সিরিয়ালে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে। তবে জীবন এখানেই থেমেছিল না মল্লিকা ব্যানার্জির। এরপরেও তার জীবনে আবার আসে দ্বিতীয় পুরুষ। কথায় আছে মানুষ মাত্রই ভালোবাসার কাঙাল। ব্যতিক্রম নন মল্লিকাও। তাই সেই ভালোবাসার মানুষটা তাকে কাজ ছাড়া শর্ত দিলে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দু’বছর কাজ ছেড়ে তার কথায় চলতেন।
কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারলেন এইভাবে চলতে পারে না। তাই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি আবার কাজ শুরু করলেন।মল্লিকার কথায় এই সম্পর্কে থাকলে তিনি শুধু নিজেকেই নন প্রত্যেক মহিলাকেই অপমান করতেন। তিনি ঠিক করেছিলেন আজকের দিনে এসে আর মার খাবেন না। তাই পাশে দুই বোন নিয়ে আর বেস্ট ফ্রেন্ড মাকে নিয়েই শুরু হলো তার লড়াই।
সেই লড়াইয়ের সুফল আজ পাচ্ছেন তিনি।এখন কলকাতার বুকে তার একটা ফ্ল্যাট সহ গাড়ি রয়েছে তার। নিজের দুই বোনকেও দাঁড় করিয়েছেন নিজের পায়ে। মেয়েও এখন ক্লাস টেনে পড়ে। কথা বলতে বলতে কান্না দলা পাকিয়ে আসে অভিনেত্রী গলার কাছে। বলতে থাকেন ‘আমার মায়ের চুলে পাক ধরেছে’। তবে এখনো তিনি অপেক্ষায় আছেন হ্যাপি এন্ডিংয়ের। অভিনেত্রী জানিয়েছেন তার বাবা বলতেন তুমি রাস্তায় চলো তো, রোজ মানুষ তোমায় ঠকাবে। তারপরেও মানুষকে তোমায় বিশ্বাস করতে হবে। তাই এখনো আমার বিশ্বাস আছে হ্যাপি এন্ডিং-এর জন্য’।