বাংলা বিনোদন জগতের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন চৈতালি চক্রবর্তী (Chaitali Chakraborty)।বেশিরভাগ বাংলা সিরিয়ালেই (Bengali Serial) খলনায়িকার (Villain) চরিত্রেই দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। তবে বেশ কিছু সিরিয়ালে পজেটিভ চরিত্রেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে এই প্রবীণ অভিনেত্রীকে। সম্প্রতি জোশ টকস নাম একটি ইউটিউব চ্যানেলের সাথে তিনি নিজের সম্পর্কে নানান অজানা কথা (Unknown Facts) নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় সামিল হয়েছিলেন অভিনেত্রী।
পজিটিভ হোক কিংবা নেগেটিভ সব চরিত্রে নিজের দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দিনের পর দিন দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি। আসলে ছোট থেকেই অভিনয়টা রক্তে ছিল তাঁর। জানা যায় এই অভিনেত্রীর দিদিমা দিপালী চক্রবর্তী থেকে শুরু করে মা শেলী পাল, বাবা পরিতোষ পাল, সবাই ছিলেন নান্দীকারের মেম্বার। এ ছাড়া বাংলার স্বরাধন্য অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী হলেন তাঁর মাসি। ফলে ছোট থেকেই রিহার্সাল, গ্রীন রুম, নাটক ,শুটিং ,এই ধরনের শব্দ শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন তিনি।
তাই ছোট থেকেই অভিনয় তাকে আলাদা করে শিখতে হয়নি বরং তা দেখেই তিনি বড় হয়েছেন। বাংলা ধারাবাহিকে তাঁর প্রথম অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে, জন্মভূমি সিরিয়ালের হাত ধরে। তখনকার দিনেও প্রথম সিরিয়ালেই খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। এই ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল স্বর্ণময়ী। প্রসঙ্গত জন্মভূমি যখন শুরু হয়েছিল তখন তাঁর বাড়িতে ছিল সদ্যজাত মেয়ে। যার বয়স ছিল এক বছরেরও কম।
সেসময় তার কাছে জন্মভূমিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে তাঁর কাছে। তখন তাঁকে জানানো হয়েছিল এই ধারাবাহিকে তাকে ৪-৫ দিনের একটা রোল করতে হবে। কিন্তু সেই পাঁচদিনের চরিত্র যে কবে ৫ বছরের হয়ে যায় তা নাকি বুঝতে পারেনি অভিনেত্রী নিজেও। তারপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ এই বয়সে এসেও অভিনয় করে চলেছেন তিনি। বর্তমানে তাকে জি বাংলার পিলু ধারাবাহিকে আহিরের পিসির চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। তবে আজকের এই সাফল্য কিন্তু অভিনেত্রীর জীবনে রাতারাতি আসেনি। পরিবারের সকলেই অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন তার মানে এই নয় তিনি খুব সহজেই অভিনয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। একটা সময় তিনি যখন ক্লাস টুয়েলভে পড়তেন তখন তিনি তার বাবার কাছে অভিনয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
সেসময় তাঁর বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন শাঁওলী মিত্রের কাছে। কিন্তু সেখানে তাকে প্রথমেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। টানা ৫ বছর বসিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সেখানে তিনি শতরঞ্চি গোটাতেন আর বাকি ফাই ফরমাস খাটতেন। কিন্তু কেউ তাকে অভিনয়ের সুযোগ দেয়নি। তার ইমোশনটা বোঝেননি কেউ। চোখ দিয়ে জল ফেলতে ফেলতেই তখন ড্রিমার ঠেলতেন তিনি। কিন্তু প্রথম থেকেই তাঁর মধ্যে ছিল অসম্ভব মনের জোর। সেই থেকেই তাঁর মনে জেদ চেপে গিয়েছিল নিজেকে অভিনেত্রী হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করবেন তিনি।
পড়াশোনাতেও ভালো ছিলেন চৈতালি। কিন্তু তারপরেও নাটক নিয়েই পড়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ে। সেখানে তার অভিনয় দেখে বন্ধুরা বলেছিল ‘১০ বছর আগে ভীড়ে অভিনয় কর’। আর তারপরেই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তিন পয়সার পালা’ নাটকে নায়িকা হয়ে পরিচিতি পেতে শুরু করেন তিনি। এরপর অশোক মুখোপাধ্যায় ‘একা এবং একাকিনি’ নাটকে অভিনয় করে ওয়েস্ট বেঙ্গল গভমেন্টের বেস্ট এক্ট্রেস আওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি। তার এই উন্নতি দেখে মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিন্দুকদের। প্রসঙ্গত ইন্ডাস্ট্রিতে বেশিরভাগ রাক্ষসী ,পেত্নীদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চৈতালি। তাই এক সহকর্মী তাকে ‘রাক্ষসী’ বলে আওয়াজ দিতেই তিনি বলেছিলেন ‘ভাগ্যিস,ঐজন্য রোজ কাজ করি’।