নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) জনপ্রিয় নায়িকা (Actress) ছিলেন চুমকি চৌধুরী (Chumki Chowdhury)। দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনে একাধিক সুপারহিট সিনেমা রয়েছে এই অভিনেত্রীর ঝুলিতে। তবে গোটা কেরিয়ারে বাধ্য মেয়ের মতো চুমকি অভিনয় করেছেন কেবলমাত্র বাবা অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমাতে।
অন্য কোনো প্রযোজক পরিচালকদের কাছ থেকে যে তিনি অফার পাননি এমনটা নয়। কিন্তু শুধুমাত্র বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে অন্য কোন প্রযোজক পরিচালকদের সাথে সিনেমা করা হয়ে ওঠেনি অভিনেত্রীর। প্রসঙ্গত পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে ছাড়াও অভিনেত্রী হিসেবেও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচয় তৈরী করেছিলেন চুমকি।
শোনা যায় সে সময় তাঁর সিনেমা দেখার জন্য দর্শকমহলে এতটাই ক্রেজ ছিল যে টিকিট ব্ল্যাকে পর্যন্ত বিক্রি হতো। নব্বইয়ের দশকে ‘মেজোবউ’,’সেজোবউ’য়ের মত একের পর এক সুপারহিট সিনেমার নায়িকা হয়েছেন চুমকি। তবে সারা জীবন বাবার সিনেমাতেই হিরোইন হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যদিও তার জন্য আজ অব্দি কোন দিন কোন আফসোস করেননি বাংলা সিনেমার ‘ভালো মেয়ে’ চুমকি চৌধুরী।
এযাবৎ তাঁকে নিয়ে কোনো গসিপ তৈরি হয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে। জানা যায় তাঁর নাকি কোনদিন অভিনেত্রী হওয়ারও ইচ্ছা ছিল না। একদিন নাকি আচমকাই নজরে পড়ে গিয়েছিলেন পরিচালক বাবা অঞ্জন চৌধুরীর। এ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছেন ‘একদিন স্কুল থেকে ফিরি। তখন বাবা ‘হীরক জয়ন্তী’ ছবির জন্য নায়িকা খুঁজছেন। হঠাৎ করে বললেন একি নায়িকা তো ঘরেই আছে’।
সেই প্রথম বাবার হাত ধরেই অভিনয় হাতে খড়ি হয়েছিল চুমকি চৌধুরীর। কিন্তু প্রথমবার অভিনয় করতে এসে অন্যান্য নবাগত অভিনেত্রীদের মতোই তাঁর মধ্যে বেশ জড়তা কাজ করছিল। সে সময় নাকি কথাও জড়িয়ে যাচ্ছিল চুমকির। আর মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ততক্ষণে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী। এমনকি তিনি নাকি বলেও ফেলেছিলেন ‘এ কাকে নিয়ে এলাম’!
যদিও এরপর বাকিটা ইতিহাস। বাবার হাত ধরেই একের পর এক সব সুপারহিট সিনেমা নায়িকা হয়েছেন চুমকি। কিন্তু বাবার সিনেমা ছাড়া আর কারো সিনেমায় কেন অভিনয় করেননি চুমকি? এ প্রশ্ন উঠে এসেছে বারবার। এর পিছনে রয়েছে এক অজানা কারণ। তা হল চুমকির বাবা অঞ্জন চৌধুরীর বারণ। এ প্রসঙ্গে ভিনেত্রী বলেছেন ‘বাবা বাইরে ছবি করতে দেয়নি। তবে একবার ‘মহাসংগ্রাম’ বলে একটি ছবি করেছিলাম ওই প্রথম ওই শেষ।
কারণ ওই সিনেমায় করার সময় অভিনেত্রী দেখেন তাঁর বাবা বারবার পরিচালক আর প্রয়োজনকে ফোন করে বলছেন ‘ছাড়, দেরি হচ্ছে কেন?’ তা শুনে নাকি অভিনেত্রীর মা বলেছিলেন ‘এমন করলে তোমার মেয়েকে কেউ কোনদিন ডাকবে না’। জানা যায় অঞ্জন চৌধুরীও নাকি মনে মনে এমনটাই চাইতেন। তাই তরুণ মজুমদারের ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবির অফার পেয়েও ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে।
তবে তার জন্য আজ অব্দি কোন আক্ষেপ নেই অভিনেত্রীর। আসলে বরাবরই খ্যাতির পিছনে ছোটা নয়, তাঁর ইচ্ছা ছিল ভালো জীবন যাপন আর সংসার করা। এখন আর সেই ভাবে বাংলা সিনেমায় দেখা যায় না অভিনেত্রীকে। তবে মাঝেমধ্যে সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখা যায়, ৯০ এর দশকের এই দুষ্টু মিষ্টি নায়িকাকে।