বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) অত্যন্ত জনপ্রিয় এক অভিনেত্রী (Actress) ছিলেন সুমিত্রা মুখার্জি (Sumitra Mukherjee)। টলিউডের ইতিহাসের প্রচুর আইকনিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন, আদায় করেছেন দর্শকদের ভালোবাসা। দীর্ঘ ৪ দশকের কেরিয়ারের ৫০০’রও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। তবে এই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনই ছিল হাজার কষ্টে মোড়া। সুমিত্রার মতো এত সফল অভিনেত্রীর শেষ পরিণতিও ছিল খুব করুণ।
১৯৪৯ সালের ৩০ মার্চ জন্ম সুমিত্রার। এই প্রতিভাবান অভিনেত্রী ছিলেন অত্যন্ত সরল, সাধাসিধে একজন মানুষ। তাঁর ঠোঁটের কোণায় সর্বদা লেগে থাকতো হাসি। সেই জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘হাসিদি’ নামেই। শোনা যায়, নায়িকা হওয়ার বাসনা নিয়ে নয়, বরং অভিনয়কে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন সুমিত্রা। সেই জন্য পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে কখনও দ্বিধাবোধ করেননি তিনি।
সুমিত্রা এমন একজন অভিনেত্রী যিনি কমেডি, ট্র্যাজেডি, ভিলেন থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মা-বৌমা- সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর ছোঁয়ায় প্রত্যেকটি চরিত্র হয়ে উঠত জীবন্ত। টলিউডের এই নামী অভিনেত্রীর কেরিয়ার শুরু হয়েছিল নাটকের হাত ধরে। এরপর তাঁর সামনে খুলে যায় সিনেদুনিয়ার দরজা। ১৯৭২ সালে ‘আজকের নায়ক’ ছবির হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন তিনি।
এরপর থেকে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি সুমিত্রাকে। চার দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে ৫০০’রও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। উত্তম কুমার থেকে শুরু করে রঞ্জিৎ মল্লিক হয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে- কাজ করেছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাধিক নামী অভিনেতার সঙ্গে। সুমিত্রার ঝুলিতে রয়েছে ‘মেমসাহেব’, ‘বসন্ত বিলাপ, ‘সঙ্গিনী’, ‘দেবদাস’, ‘শ্রীকান্তের উইল’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র মতো একাধিক আইকনিক সিনেমা।
তবে সুমিত্রার অভিনয় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে এত সমৃদ্ধ করলেও তাঁকে কোনোদিনই বিশেষ সম্মান দেয়নি ইন্ডাস্ট্রি। বাকি পাঁচজন পার্শ্বচরিত্রের শিল্পীর মতো সুমিত্রাকেও দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। শোনা যায়, এই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বেশ কষ্টের। বিখ্যাত প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় ছিলেন সুমিত্রার প্রথম স্বামী। দুই সন্তানের জন্মের পর বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। এরপর প্রযোজক রবীন্দ্রনাথ মলহোত্রার সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে থাকতে শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু সেই সম্পর্কেও নাকি সুখ ছিল অধরা।
শোনা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড একা হয়ে গিয়েছিলেন সুমিত্রা। নিজের খরচ চালানোর জন্য ছোটখাটো সব ধরণের চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন তিনি। অনেকবার এমনও হয়েছিল কাজ করার পর টাকা পাননি অভিনেত্রী, অনেক সময় আবার টাকা দেওয়ার নাম করে ঘোরানোও হয়েছিল তাঁকে। শোনা যায়, টলিউডের এই নামী অভিনেত্রী একসময় ডিপ্রেশনে চলে যান। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন তিনি। যদিও তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এত বড় একজন অভিনেত্রীর এমন করুণ পরিণতির কথা সত্যিই কেউ ভাবেনি।