অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya) মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সদাহাস্য এক মুখ। যার ঠোঁটের কোণে সর্বক্ষণ লেগে থাকে অনাবিল হাসি। যার মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত পজিটিভিটি। আর হবে নাই বা কেন, নামেও যেমন কাজেও তেমন, সত্যিই তিনি অপরাজিতা। হার মানা রক্তে নেই তার। একদলা মাংসপিন্ড হয়ে জন্মের পর থেকেই শুরু হয়েছিল তার জীবনযুদ্ধ। সাড়ে তিন মাসের কঠিন লড়াই শেষে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
অভিনেত্রীর ব্যাক্তিগত জীবনের গল্প শুনলে বোঝা যায় এই লড়াকু স্বত্তা তার মধ্যে একদিনে আসেনি। বরং বংশানুক্রমিক নিজের দিদা এবং মায়ের জীবনের নানা ওঠা পড়ার মধ্যে দিয়ে ঠকে শিখেছেন তিনি। জানা যায় অপরাজিতার দিদা ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের (Master Da Surja Sen) ছাত্রী বিভা ঘোষ (Biva Gosh)। একসময় স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। সেসময় নাকি তিনিই ছিলেন ঢাকার প্রথম মহিলা যিনি ম্যাট্রিকে প্রথম হয়েছিলেন।
কিন্তু খুবই অল্প বয়সে তাঁর বাবা তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেন বয়সে অনেকটাই বড় এক প্রফেসরের সাথে। পরবর্তীতে অপরাজিতার মা ও মাসির জন্মের পরেই নাকি পেশায় প্রফেসর অপরাজিতার দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখনকার যুগের মানুষ হয়েও অপরাজিতার দিদা এতটাই আদর্শবাদী ছিলেন যে সেই পরিস্থিতিতে মেয়েদের নিয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। বাপের বাড়ি এসেই হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
শুধু তাই নয় সেসময়ই তিনি ঠিক করেছিলেন দুই মেয়েকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন তিনি। শুধু মুখের কথা নয় কাজেও করে দেখিয়েছিলেন অপরাজিতার দিদা। পরবর্তীতে অপরাজিতার মা তখনকার দিনে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির পলিটিকাল সায়েন্সে এমএ, আর মাসি ইংলিশে ডাবল এমএ করেছিলেন। পরবর্তীতে বিয়ের পর অপরাজিতার মায়ের গর্ভে আসে দুই যমজ সন্তান। যাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় আর একজন বেঁচে যায় শারীরিক সমস্যা নিয়ে।
এই ঘটনার কয়েক বছর পরেই তার গর্ভে আবারও এক সন্তান আসে।তখনই তিনি ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে যায়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও চাকরি করতেন তিনি। গর্ভাবস্থার সাড়ে সাত মাসে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে একাই বাসে চেপে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে চলে গিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে ঢোকার মুখে তিনি অনুভব করেছিলেন শরীর থেকে বেরিয়ে গেল একটি মাংসপিন্ড। সেই মাংসের দলা কন্যা সন্তানই হলেন আজকের অপরাজিতা আঢ্য। চারিদিকে নল লাগানো, কাঁচের বাক্সে শুয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে লড়াই চালিয়ে জয়ী হন তিনি।