বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার (Tollywood superstar) নাম যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে এখনও অনেকেই একবাক্যে ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) নাম নেবেন। অভিনেতা প্রয়াত হয়েছেন চার দশকেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও দর্শকরা এখনও তাঁকে ভোলেননি। তাঁর সেই ভুবনভোলানো হাসি দেখলে এখনও ঝড় ওঠে অনুরাগীদের মনে।
বিনোদন দুনিয়ার এক কিংবদন্তি চরিত্র উত্তম কুমার, এই বিষয়ে কোনও দ্বিধা নেই। এখনও অনুরাগীরা তাঁর অকালমৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারে না। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই দিনটি এখনও টলিউডের ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কিত দিন হিসেবে জ্বলজ্বল করছে। কারণ এই দিনই সকলকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছিলেন ‘মহানায়ক’ (Uttam Kumar death)। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন অভিনেতা।
উত্তম কুমার এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’এর মাঝে থেকেছিলেন। ১৯৮০ সালের ২৩ জুলাই সকাল থেকেই অভিনেতার মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ ছিল। সেই সময় আবার চলছিল ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার শ্যুটিং। প্রযোজকের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেই জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েই শ্যুটিং সেটে পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘মহানায়ক’।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই সময় শুধুমাত্র শরীরই নয়, মনের উদ্বেগটাও অভিনেতার কম ছিল না। সেই সময় সুপ্রিয়া দেবী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অভিনেতার মাথাও ওপরেও নাকি ছিল দেনার চাপ। জানা যায়, ২৩ তারিখ গাড়িতে উঠেই প্রথম ধাক্কাটা পেয়েছিলেন উত্তম কুমার। অভিনেতা দেখেন, তাঁর প্রিয় টেপ রেকর্ডারটা চুরি হয়ে গিয়েছে। রোজ শ্যুটিংয়ের যাতায়াতের পথে গান শোনা ছিল কিংবদন্তি অভিনেতার অভ্যাস। তাই টেপ রেকর্ডার চুরি যাওয়ায় বেশ বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
উত্তম কুমারের সহ-অভিনেতারা জানিয়েছিলেন, সেইদিন শ্যুটিং সেটেও বেশ আনমনা ছিলেন অভিনেতা। এর মধ্যেই মেক-আপ সেরে শ্যুটিং ফ্লোরে এসে হাজির হন তিনি। দৃশ্যটা ছিল অভিনেত্রী সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন আর উত্তম কুমার দাঁড়ি কামাতে কামাতে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন আর বলছেন, ‘আমিও দেখে নেব, আমার নামও গগন সেন…’। এই সংলাপটি বলার সময় থেকেই নাকি অভিনেতার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সংলাপ বলা বন্ধ করেননি। সিনেমার সংশ্লিষ্ট দৃশ্যটি দর্শকরা লক্ষ্য করলে দেখবেন, বুক চেপে কথা বলছেন উত্তম কুমার। জানা যায়, এটিই ছিল অভিনেতার শেষ শট।
শ্যুটিং শেষে বাড়ি ফিরে সেদিন রাতে এক বন্ধুর বাড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেও গিয়েছিলেন ‘মহানায়ক’। তবে বাড়ি ফিরে আসার পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনেতার অসুস্থতাও বাড়িতে শুরু করেছিল। এরপর কিংবদন্তি অভিনেতাকে দক্ষিণ কলকাতার এক নামী নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করার ২৪ ঘণ্টা হতে না হতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন উত্তম কুমার। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই সকলকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন তিনি।