দেখতে দেখতে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলেছে। একসময় যেখানে মা বাবা, জ্যাঠা-জ্যেঠিমা সহ বিশাল যৌথ পরিবার নিয়ে থাকতে পছন্দ করতে সকলে। আজ সেই নিয়ম অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ছোট ছোট ফ্যামিলি হতে শুরু করেছে চারিদিকে। এমনকি টিভি খুললে বা পেপার হাতে পেলে প্রায় দিনই দেখা যায় যে সন্তানদের হাতেই অত্যাচারিত হচ্ছে বৃদ্ধ মা বাবারা। আধুনিক সমাজে বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের ঠিকানা হয়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম (Old Age Home)।
আজ থেকে এক বা দু দশক পিছিয়ে গেলেই তফাৎটা আরও ভালো বোঝা যায়। সেই সময় হাতে গোনা কয়েকটা বৃদ্ধাশ্রম ছিল। যেখানে ধনী সন্তানরা নিজেদের বাবা মায়েদের রেখে যেতেন। কারণ তাদের ছোট্ট পরিবারে বাবা মায়ের জায়গা নেই। সমাজের এহেন চিত্র দেখে তাই নচিকেতার (Nachiketa) গাওয়া ‘আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’ গানটা মনে পরে যায় বারে বারে।
তবে বৃদ্ধাশ্রমকে শুধুমাত্র দায়িত্ব এড়ানোর দিক থেকে দেখতে রাজি নন টলিউডের অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)। বৃদ্ধাশ্রমে গেলেই যে মা-বাবা ভালো থাকবেন না, এই ধারণা তাঁর মতে ভুল। বৃদ্ধাশ্রমেই নাকি বেশি ভালো থাকবেন বৃদ্ধ মা বাবারা এমনটাই মনে করেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি নিজেও সেই ক্ষত তুলে ধরে দিয়েছেন একটি বার্তা। আর সেই বার্তার জেরেই শুরু হয়েছে বির্তর্কের।
গতকাল ছিল বিশ্ব মাতৃত্ব দিবস, সেই উপলক্ষে নেটপাড়ায় সকলেই কমবেশি মায়ের সাথে ছবি শেয়ার করা থেকে মায়ের উদ্দেশ্যে দুচার কথা লিখেছেন। তবে মাতৃ দিবসে একটা সম্পূর্ণ অন্য রকম প্রশ্ন রেখেছিলেন অভিনেতা সপ্তর্ষি রায়। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বলছিলাম, সবাই যদি মাকে এতই ভালোবাসেন তাহলে বৃদ্ধাবাসগুলিতে করা থাকে? তাঁদের ছেলে মেয়েরা বোধয় কেউই এই ফেবু পারে নেই!’
অভিনেতার এই পোস্টেই নিজের বক্তব্য রাখেন সুদীপ্তা। তবে আর পাঁচজনের থেকেই একটু হলেও আলাদা অভিনেত্রীর মত। এদিন অভিনেত্রী লেখেন, বৃদ্ধাবাসের সাথে মা-বাবাকে না ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক কিন্ত নেই। আজকালকার নিউক্লিয়ার পরিবারের দায়িত্ববান ছেলেমেয়েরাই কিন্তু বৃদ্ধাবাসে মা বাবাকে রেখে আসেন, আর সেটা তাদের সুবিধার জন্যই।’
কিন্তু কেন এমনটা বললেন অভিনেত্রী? এর সাপেক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমরা সারাদিন কাজের পিছনে ছুটবো, টাকা রোজগার করব, বাঁচা মানুষ করা থেকে নানা দায়িত্ব পালন করব আর মা বাবা এক বাড়িতে বসে টিভি সিরিয়াল দেখে একাকিত্ব কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবে। কোনো এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে তো দায়িত্বশীল কাউকে তৎক্ষণাৎ পাশে পাওয়া যাবে না। এমনভাবে বাবা মাকে রাখার থেকে অনেক ভালো সমবয়সী আরও অনেক মানুষের সাথে বাকি জীবনটা কাটানো। এতে প্রয়োজোজনের সময় প্রশিক্ষিত লোকেদের পাশে পাওয়া যায়, যেটা অনেক বেশি জরুরি’।
সুদীপ্তার এই মন্তব্য অনেকের কাছেই শ্রুতিমধুর হয়নি। অনেকেই মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বিরুদ্ধে। এমনকি যিনি পোস্টটি করেছেন সেই অভিনেতার মতেও, মা বাবা বৃদিধ বয়সে টাকা পয়সা তো চাইছে না চায় শুধু একটি সময়। তাছাড়া অনেক সময়েই দেখা যায় যে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বয়স্ক মা-বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে অভিনেত্রীরই এই মন্তব্যের জেরে কিছুটা হলেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।