বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) অত্যন্ত উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হলেন সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। অবশ্য শুধুমাত্র বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বললে ভুল হবে, তাঁকে বলা উচিত ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। নিজের দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে কোটি কোটি দর্শকের মন জয় করেছেন এই অভিনেত্রী। সেই সঙ্গেই আদায় করেছেন ‘মহানায়িকা’ তকমা। বাঙালি সিনেপ্রেমী মানুষদের কাছে আজও উত্তম-সুচিত্রা জুটি মানে আবেগ, গর্ব।
এত বড় এক তারকা হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৮ থেকে ২০১৪ সাল অবধি নিজেকে আড়াল রেখেছিলেন সুচিত্রা। টানা ৩৬ বছর পর্দার আড়ালে থাকা নিঃসন্দেহে কোনও সাধনার থেকে কম নয়। কিন্তু কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘মহানায়িকা’? এতগুলো বছর পরেও কিন্তু সেই উত্তর আজও অজানাই রয়ে গিয়েছে।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার পাবনায় জন্ম সুচিত্রার। অভিনেত্রীর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অপরদিকে তাঁর মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। টলিউডের এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর ডাক নাম ছিল রমা। ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে এসেছিলেন সুচিত্রা। সেখানে আবার আশ্রয় নিয়েছিলেন ঢাকা শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পরিবারও। ১৯৪৭ সালে তাঁর ছেলে দিবানাথ সেনের (Dibanath Sen) সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন সুচিত্রা।
‘মহানায়িকা’র স্বামী দিবানাথ সেনের মামা ছিলেন বিমল রায়, সেই সময়কার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। অভিনেত্রীর মামা শ্বশুরই তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর স্বামী এবং শ্বশুরমশাইয়ের অনুমতি নিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায় ছবি’র হাত ধরে অভিনয় জগতে পা রাখেন রমা। এই ছবির জন্যই তাঁর নাম রাখা হয় সুচিত্রা। যদিও ‘মহানায়িকা’র প্রথম ছবি রিলিজ করেনি। তবে এর পরের বছর ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ব্যস, এরপর থেকে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে।
দু’বছর পর রিলিজ করে সুচিত্রার প্রথম হিন্দি সিনেমা। ‘দেবদাস’এ কিংবদন্তি দিলীপ কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। জিতে নেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে কোনও আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছিলেন সুচিত্রা। এরপর ‘সাত পাকে বাঁধা’র জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।
কেরিয়ারে এত সাফল্য পেলেও শোনা যায়, দাম্পত্য জীবনের শেষ দিকে এই নাম, খ্যাতি, যশের জন্য স্বামী দিবানাথ সেনের সঙ্গে রোজকার অশান্তি লেগে থাকতো সুচিত্রার। বহু নামী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দু’জনের মধ্যে মারামারিও হতো। একবার নাকি রাতে নিজের বাড়ি ছেড়ে কানন দেবীর বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ‘মহানায়িকা’। এরপর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নিউ আলিপুরে আলাদা থাকা শুরু করেন অভিনেত্রী।
১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রয়াত হন সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ। স্বামীর মৃত্যুর পর আর ৯ বছর অভিনয় জগতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রণয় পাশা’ ছিল অভিনেত্রীর শেষ ছবি। এই ছবিতে কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে দেখা গিয়েছিল ‘মহানায়িকা’কে। এরপর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। অনুরাগীদের জন্য রেখে গেলেন সিলভার স্ক্রিনে তাঁর শেষ অ্যাপিয়ারেন্স। এখনও সিনেপ্রেমী মানুষদের সামনে সুচিত্রার নাম উঠলে জ্বলজ্বল করে ওঠে সেই ছবিই।