বাংলা ছবির জগতে একাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছে তাদের মধ্যেই অন্যতম একজন হলেন মনু মুখোপাধ্যায় (Monu Mukhopadhyay)। যতবারই অভিনয় করেছেন ততবারই নিজের দুর্দান্ত অভিনয়ের ক্ষমতা দিয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। অবশ্য শুধুই যে রুপোলি পর্দা তা কিন্তু নয়, থিয়েটার, সিরিয়াল থেকে শুরু করে বড়পর্দায় অভিনয় সবই করেছেন তিনি। অভিনেতার বিখ্যাত ছবি ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ আজ দর্শকদের অন্তরে গেঁথে রয়েছে।
১৯৩০ সালের ১লা মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই মহান অভিনেতা। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি বেশ আকর্ষণ ছিল তাঁর।সেই থেকেই অভিনয় শিখতে থিয়েটারে আসা। কেরিয়ারের শুরুতে কলকাতা থিয়েটারে অভিনয় করতেন অভিনেতা। সেখান থেকেই হয়েছিল অভিনয়ের হাতে খড়ি। যা তার অভিনয় জীবনের চলার পাথেয় হয়েছিল।
বিখ্যাত বাঙালি পরিচালক সত্যজিৎ রায় নিজে ডেকে কাজ দিয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়কে। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে মছলি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা। ফোন করে সেই অভিনয়ের অফার দিয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। সেই সময়ে মোবাইলের যুগ ছিল না, ল্যান্ড ফোনেই সত্যজিৎ বাবু আমন্ত্রণ জানান মনু মুখোপাধ্যায়কে। ঠিক হয় বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে সাক্ষাৎ হবে দুজনের।
পৌঁছানোর পর তাকে ভালো করে মেকআপের জন্য বলেন। প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে চলে মেকআপ পর্ব। মেকআপ আর্টিস্টের থেকে মেকআপ সেরে যখন রুমে আসেন মনু তখনই সেখানে উপস্থিত হন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্রবাবুরও একপাঠ মেকআপ পর্ব মিটে গিয়েছিল সেই সময়ে। মনুকে দেখিয়ে সৌমিত্রকে সত্যজিৎ রায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘ঠিক লাগছে?’ এই প্রশ্নের উত্তরে হ্যা বলতেই মছলিবাবার চরিত্রের জন্য মনু মুখোপাধ্যায়কে ঠিক করে ফেলেন সত্যজিৎ রায়।
এরপর শুরু হয় ছবির শুটিং, ডিসেম্বর মাসে বেনারসে ঠিক হয়েছিল লোকেশন। শুটিংয়ের সমস্ত দায়িত্ব ছিল সত্যজিৎ রায়ের তবে অভিনয়টা একশটেই ওকে করতে হত অভিনেতাকে। এরপিছনে অবশ্য কারণ রয়েছে, আগে বলেছি ডিসেম্বরে হচ্ছিল শুটিং। আর ঠান্ডার মধ্যেই গঙ্গায় ডুব দেবার দৃশ্য ছিল যেটা মনু মুখোপাধ্যায়কে করতে হয়েছিল। শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায় অভিনেতাকে জানিয়েছিলেন, ‘ মনু, শট কিন্তু একেবারেই ওকে করতে হবে। নাহলে আবার গঙ্গায় ডুব দিতে হবে তোমাকে’।
পরিচালকের কথামত একেবারেই পারফেক্ট শট দিয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়। শট শেষে সত্যজির রায় নিজের গায়ের চাদর খুলে জড়িয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতার গায়ে। অভিনেতা নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁর জীবনের সমস্ত কাজের মধ্যে সেরা কাজ ও চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল এই মছলিবাবার চরিত্রটি। এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের মত আন্তরিকতা আর কারোর মধ্যেই দেখতে পাননি তিনি।
‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে সিলেক্ট হবার কারণটিও অভিনেতা নিজেই জানিয়ে ছিলেন। সেটা ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখের সাথে মেকআপের পর তার মুখের মিল। তবে পরবর্তীকালেও অজস্র হিট বাংলা সিনেমা এমনকি সিরিয়ালে অভিনয় করেহসালেন তিনি। জীবিত অবস্থায় সবচেয়ে প্রবীণ অভিনেতা ছিলেন তিনি। শেষ জীবনে দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন তিনি। তবে অভিনয় জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র গতবছর ডিসেম্বরে ৯০ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।