সেলেব্রিটিদের নিয়ে মাতামাতির এমনিতেই শেষ নেই। সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে গ্ল্যামার দুনিয়ার তারকাদের এক ডাকেই চেনেন অনেকে। তবে এমন এক মহিলা রয়েছেন যাকে আজ হয়তো কারোরই মনে নেই। কে তিনি? তিনি হলেন এস্টার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম (Esther Victoria Abraham)। কি? চেনেন না তো এই মহিলাকে! আসলে চেনার কোথাও নয়। একপ্রকার ইচ্ছাকৃতভাবেই মানুষ ভুলে গিয়েছে এই মহিলাকে।
তবে ইতিহাসের পাতা কিছুই ভুলে যায় না। সমস্তটাই থেকে যায় ইতিহাস হয়ে, তেমনি এস্টার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম নামের ইতিহাস রয়ে গিয়েছে। আজ সেই ইতিহাসকেই বংট্রেন্ডের পাতায় তুলে ধরবো। একেবারে শুরু থেকেই শুরু করা যাক ইতিহাসের এই কাহিনী। সালটা ১৯১৬, কলকাতার এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম এস্টার ভিক্টোরিয়া আব্রাহামের। বাবা দুটি বিয়ে করেছিলেন তাই প্রথম পক্ষ ও দ্বিতীয়পক্ষের সন্তানরা একত্রেই থাকত।
তথাকথিত পুরোনো ধ্যান ধারণাতেই মানুষ হয়েছিলেন এস্টার। কলকাতার একটি গার্লস স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা থেকে নাচ গানেও বেশ পারদর্শী ছিলেন। পড়াশোনার শেষে মন্টেসরি স্কুলের শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন প্রথমে। তবে নাচ ও গানের প্রতি আকর্ষণ টেনে নিয়ে গিয়েছিল থিয়েটারের জগতে। পরিবারের অমতেই এক থিয়েটার অভিনেতার সাথে প্রেম ও বিয়ে হয়।
কিন্তু বিয়ে করে মেলেনি সুখ, ১ সন্তান হবার পর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে ভাগ্য খোলে বিচ্ছেদের পর বোন রোজের সাথে দেখা করতে বোম্বে গিয়ে। সেখানে এক পরিচালকের নজরে পরে যান এস্টার। পরিচালক রোজের বদলে ‘দ্য রিটার্ন অফ দা তুফান মেল’ ছবিতে কাস্ট করেন এস্টারকে। তবে এস্টার নয়, প্রমিলা নামে গ্ল্যামার জগতে প্রবেশ ঘটে তাঁর। এরপর ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ে কাজ মিলতে থাকে। প্রায় দুই দশক ধরে চুটিয়ে কাজ করেছেন ইটনি।
এরপর ১৯৪৭ সালে প্রথম মিস ইন্ডিয়া আয়োজন হলে বিজেতা হন তিনি। তবে মিস ইন্ডিয়া হবার সময়ে গর্ভবতী ছিলেন তিনি। প্রথম বিয়ের পর সৈয়দ হাসান আলী জায়েদীরনামের একে পাকিস্তানি অভিনেতাকে বিয়ে করেন। এরপর প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামী একসময় প্রমিলাকে ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে যায়। প্রমিলা অবশ্য পাকিস্তানে ফেরেননি, যেতেন তবে তা শুধু মাত্র নিজের ছবির প্রচারের কাজে।
অভিনেত্রীর পাকিস্তানে যাতায়াত নিয়ে তাকে পাকিস্তানের গুপ্তচরের তকমা দেওয়া হয়। খুবই বাজেভাবে ফাঁসানো হয় তাকে গুপ্তচর অভিযোগে। দীর্ঘ আইনি লড়ায়ের পরে অবশ্য সত্যি সামনে আসে যে তিনি কোনো পাকিস্তানি গুপ্তচর নন। তবে সুনামের থেকে বদনাম বেশি ছড়িয়ে পরে। তাই সুনাম ঢাকা পড়ে যায় মিথ্যে অপবাদে। ২০০৬ সালের ৬ই অগাস্ট প্রমিলা ওরফে এস্টার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম প্রয়াত হন। ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেও অভিনেত্রীকে আজ কারোরই মনে নেই।