সারা দেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে আলোর উৎসব দীপাবলি (Diwali)। মা কালীর আরাধনাতেও মেতেছেন অনেকে। কালী পুজোর (Kali Puja) কথা হবে অথচ শ্যামা সঙ্গীতের প্রসঙ্গ আসবে না এমনটা তো হয় না। ‘আমার সাধ না মিটিলো’, ‘তোমার কর্ম তুমি করো মা’র মতো বেশ কিছু শ্যামাসঙ্গীত (Shayama Sangit) রয়েছে যা এখনও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে।
তবে এই গানগুলি গুনগুন করলেও কখনও ভেবে দেখেছেন গায়ক কে? মায়ের প্রতি এতটা আকুতি নিয়ে কে গেয়েছেন এই কালজয়ী গানগুলি? অনেকের কাছেই এই শ্যামাসঙ্গীতগুলি বেশ পরিচিত হলেও গায়ক পান্নালাল ভট্টাচার্য (Pannalal Bhattacharya) তেমন জনপ্রিয় নন।
যে কালজয়ী শ্যামাসঙ্গীতগুলি ছাড়া কালীপুজো অচল, সেগুলির বেশিরভাগই গেয়েছেন পান্নালাল। নিজের দু’দশকের সঙ্গীত জীবনের প্রথমাংশে কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, রামপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেনের মতো কিংবদন্তিদের আখর ছিল পান্নালালের কাছে। দ্বিতীয়াংশে আবার ছিল দিলীপ কুমার রায়ের মতো নামী সঙ্গীতকারেরা।
একাধিক কালজয়ী শ্যামাসঙ্গীতের জনক পান্নালাল নিজের জীবনে ৪০টি শ্যামাসঙ্গীত, ৩৬টি আধুনিক গান এবং ৩টি বাংলা সিনেমার গান গেয়েছেন। প্রতিভাবান এই গায়কের নিজের লেখা এবং সুর করা বেশ কিছু গানও কিন্তু রয়েছে। তবে এত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও পান্নালালের গাওয়া আধুনিক গানগুলি নিয়ে চর্চা হয় না বললেই চলে।
১৯৫৬ সালে মমতা চট্টোপাধ্যায়ের লেখা এবং প্রবীর মজুমদারের সুর দেওয়া ‘তীরে তীরে গুঞ্জন’ কিংবা ‘আমার কাজল পাখি’ শুনে এখনও মুগ্ধ হয়ে যেতে পারেন শ্রোতারা। গানের দুনিয়ায় কিশোর অবস্থায় পা রেখেছিলেন। তারুণ্যে প্রবেশের আগেই পান্নালাল অত্যন্ত পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে যান।
কালজয়ী বিভিন্ন শ্যামাসঙ্গীতের জনক পান্নালাল এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার গান আপামর বাঙালি যতবার শুনেছেন ততবার মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর গলায় ‘মা’য়ের জন্য যে আকুতি রয়েছে তা অন্য কারোর গলায় পাওয়া সত্যিই মুশকিল। পান্নালালের গাওয়া গানগুলি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে রেকর্ড কোম্পানিগুলি সেখান থেকে আয় করতেন মোটা টাকা।
তবে এত প্রতিভাবান একজন গায়ক হওয়া সত্ত্বেও পান্নালাল পাননি তাঁর যোগ্য সম্মান। আধুনিক গানের প্রভাবের জেরে তাঁর গাওয়া শ্যামাসঙ্গীত সেভাবে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। এত ভালো গায়ক হওয়া সত্ত্বেও সেই জন্য অনুষ্ঠানের ডাক পেতেন না। নিজেকে বদলাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। এরপর কালীঘাটে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর তো মাঝেমধ্যেই কেওড়াতলায় চলে যেতেন পান্নালাল। গায়ক বুঝতে পারতেন বৈরাগ্যের হাতছানির কথা। সেই সঙ্গে এও বুঝেছিলেন, একজন কোটিপতি এবং একজন ভিখারি দু’জনেই এক আগুনে পুড়ছে। এটাই হয়তো জীবন। বুকে একরাশ চাপা কষ্ট নিয়েই এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন পান্নালাল।