আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কোনও না কোনও সময় এমন কোনও একটি কঠিন পরিস্থিতি এসেছে, যখন মনে হয়েছে এর থেকে বেরনোর হয়তো আর কোনও উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ হার স্বীকার করে নেন, আর কিছু মানুষ নিজেদের লড়াই চালিয়ে যান। আজকের প্রতিবেদনে এই দেশের এমনই ৫ বিশেষভাবে সক্ষম বডিবিল্ডারের (Divyang bodybuilder) কথা তুলে ধরব যারা নিজেদের জীবনের অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতেও হার মানেননি। আর এখন তাঁরাই দুনিয়া কাঁপাচ্ছেন।
আনন্দ আর্নল্ড (Anand Arnold)- এই তালিকার প্রথম নামই হল আনন্দের। তাঁর জন্ম পাঞ্জাবের লুধিয়ানায়। ছোটবেলা থেকেই ছিল বডিবিল্ডিংয়ের শখ। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে দিয়েছিলেন অনুশীলন। তবে আনন্দের যখন ১৫ বছর বয়স তখন তাঁর মেরুদণ্ডে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, তাঁর মেরুদণ্ডের হাড়ের নীচের অংশে ক্যান্সার হয়েছে। সার্জারির পর আনন্দের চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়।
শুধুমাত্র ঘাড়ের নীচ থেকে হাত অবধি নাড়াতে পারতেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে আনন্দের কোমরের ওপরের অংশ কাজ করা শুরু করে। এরপর ফের বডিবিল্ডিং শুরু করেন তিনি। হুইলচেয়ারে বসেই অনুশীলন শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। আনন্দ নিজের কেরিয়ারে প্রায় ১২বার মিস্টার পাঞ্জাব, ৩বার মিস্টার ইন্ডিয়া এবং ১বার মিস্টার ওয়ার্ল্ড খেতাব জিতেছেন।
গোপাল সাহা (Gopal Saha)- তালিকার দ্বিতীয় নামটি হল পশ্চিমবঙ্গের গোপালের। তাঁর পা কাজ করে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কঠোর অনুশীলন করে যে চেহারা বানিয়েছেন তা এককথায় দুর্দান্ত। গোপাল মিস্টার ইন্ডিয়া বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতেছেন।
রাজেশ জন (Rajesh John)- তালিকার তৃতীয় নামটি হল রাজেশের। কেরলের এই তরুণ বডিবিল্ডার চিকিৎসকদের গাফিলতির জন্য ছোটবেলাতেই নিজের পা হারান। সেই কারণে তাঁকে ক্যালিপারও পরতে হয়। তবে তা সত্ত্বেও বডিবিল্ডিংয়ের অনুশীলন বন্ধ করেননি তিনি। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতেছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও অবশ্য রাজেশের লড়াই কমেনি। খেতাব জেতার পরও পরের বছর চ্যাম্পিয়নশিপে রাজেশ কোনও স্পনসর পাননি।
রেশমা (Reshma)- তালিকার চতুর্থ নামটি হল মুম্বইয়ের রেশমার। ছোটবেলায় একদিন হঠাৎ রেশমার জ্বর আসার পর জানা যায় তাঁর পোলিও হয়েছে। এরপর তাঁর দু’পায়ের সার্জারি হয়। মোট ৩২টি সেলাই পড়েছিল। তবে তা সত্ত্বেও জিম যাওয়া বন্ধ করেননি তিনি। ব্যথা পা নিয়েই নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন রেশমা। জানিয়ে রাখি, ২০২২ শেরু ক্ল্যাসিক চ্যাম্পিয়নশিপে একমাত্র মহিলা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন রেশমা এবং সেই খেতাব নিজের নামে করেছিলেন।
মুকেশ মীনা (Mukesh Meena)- জয়পুরের মুকেশ মাত্র ৮ বছর বয়সে চিকিৎসকের ভুল ইঞ্জেকশনের জন্য একটি পা হারান। তবে তা সত্ত্বেও মুকেশ কিন্তু হার মানেননি। উনি নিজের ফিটনেসের ওপর কাজ চালিয়ে যান।
আজ মুকেশ একজন নামী প্রফেশনাল বডিবিল্ডার। মিস্টার রাজস্থান জুনিয়র, মিস্টার রাজস্থান, আইবিবিএফ মিস্টার ইন্ডিয়া এবং মিস্টার ইন্ডিয়ার মতো একাধিক নামী বডি বিল্ডিং খেতাব জিতেছেন তিনি।