কথায় আছে বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই তেরো পার্বণের একটি হল রথযাত্রা উৎসব (Rath Yatra Festival)। মূলত ওড়িশা আর পশ্চিমবঙ্গে বেশ জৌলুসপূর্ণভাবেই পালিত হয় এই উৎসব। আর রথযাত্রা মানেই সবার আগে মাথায় আসে পুরী। নীল সমুদ্র আর পুরীর গজার স্বাদ যেন মুখেই লেগে থাকে। জীবনে একবার অন্ততপক্ষে প্রায় সকলেই পুরি ঘুরতে গিয়েছেন। আর পুরী গিয়ে দর্শন করেছেন জগন্নাথের।
আজ অর্থাৎ ১২ই জুলাই হল রথযাত্রার সেই শুভ দিন। প্রতিবছর এই দিনে জায়গায় জায়গায় রথ টানা হয়। কিন্তু গতবছর থেকে এবছর পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন থেকে শুরু করে আংশিক লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে সকলে। তবে বিশেষ এই দিনটির গুরুত্ব কিন্তু লকডাউনেও কমেনি বিন্দুমাত্র। আজ রথযাত্রার এই বিশেষ দিনেই পুরীর মন্দিরের কিছু ওয়াজান রহস্যের কথা ভাগ করে নেব।
পুরীর মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে। সাধারণত হাওয়া যেদিকে বয় সেদিকেই পতাকা ওড়ার কথা। কিন্তু পুরীর মন্দিরের ওপরে থাকা পতাকাটি হওয়ার বিপরীত দিকে উড়তে থাকে। শুধু তাই নয়, পুরীর মন্দিরের যে সুদর্শন চক্রটি রয়েছে সেটিকে আপনি যেকোনো জায়গা থেকেই দেখলেও মনে হবে যেন আপনার দিকেই রয়েছে সেটির অভিমুখ।
পুরীতে পতাকার হওয়ার উল্টোদিকে ওড়ার কারণের সাথেই জুড়ে রয়েছে আরো একটি অব্দুত ঘটনা। সেটি হল দিনের বেলায় সমুদ্রতট থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে যেটা একেবারেই উল্টোটা হওয়া উচিত। একইভাবে সন্ধের দিকে আবার সমুদ্র থেকে সমুদ্র তটের দিকে হাওয়া বয়। কিন্তু এই দুটিই একেবারে উল্টো হওয়া উচিত।
পুরীর মন্দিরের ওপর কোনো পাখি থেকে শুরু করে বিমান উড়তে বা চলাচল করতে পারে না। সেই কারণেই হয়তো কেউ পুরীর মন্দিরে পাখি বসে থাকতে দেখতে পাননি। তাছাড়া ছায়া মন্দিরের সবচাইতে বড় প্রাসাদের ছায়া পরে না। দিনের কোনো সময়েই এই প্রাসাদের ছায়া দেখতে পাওয়া যায় না।
অবাক করে দেবার মত বিষয় হল। পুরীর মন্দিরে প্রতিদিন একই পরিমাণ রান্না করা হয়। কারণ প্রতিদিন হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক মানুষ আসেন ভোগ প্রসাদ খেতে। কিন্তু একই পরিমাণ রান্না করলেও কোনোদিন খাবার কম পড়ে না। এমনকি খাবার পড়েও থাকে না। এটি সত্যিই এক অদ্ভুত ঘটনা।
এছাড়াও ভোগ রান্না নিয়েও আরেকটি রহস্যজনক ঘটনা রয়েছে। জানা যায় মন্দিরের রান্নাঘরে একটির ওপর আরেকটি করে মোট সাতটি রান্নার পাত্র বসানো হয় রান্নার জন্য। কিন্তু আশ্চর্জ্জনকভাবে সবার প্রথমে রান্না হয় একেবারে ওপরে থাকা সাত নম্বর হাঁড়িতে। এরপর ধীরে ধীরে নিচের হাঁড়িগুলিতে রান্না হয়।
অনেকের মতে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে। মন্দিরেপ্রবেশের পর প্রথম সিড়িতে পা দেওয়া মাত্রই সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পাবেন না। অথচ দ্বিতীয় সিঁড়ি থেকেই আবার সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে পাবেন। বিশেষত সন্ধ্যের দিকেই এটি বেশি হতে দেখা যায়।