আমাদের দেশে আজও সবচেয়ে বড় সমস্যা দারিদ্র। এই দেশে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন প্রায় ৮৬.৮ মিলিয়ন মানুষ । তাই গরীব ঘরে প্রতিভার খোঁজ মিললেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হারিয়ে যায় অর্থের অভাবে। গরীবের চোখে দেখা স্বপ্ন তাসের ঘরের মত চুরমার হয়ে যেতে দু’দন্ডও সময় লাগেনা। কিন্তু তবুও ভুখা পেট স্বপ্ন দেখা থামায় না, আর সেই স্বপ্ন পূরণ করে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনার উদাহরণ ও এদেশে কম নেই।
সাক্রি তালুকার সামোদে গ্রামে জন্ম হওয়া রাজেন্দ্র বাবুই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভিল উপজাতির রাজেন্দ্র আজ সফল একজন IAS অফিসার। বর্তমানে গোটা দেশের কাছেই একজন আদর্শ উদাহরণ তিনি। আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছালেও তার শৈশব জীবন মোটেও সুখকর ছিলনা। রাজেন্দ্র বাবুর মা যখন গর্ভবতী তখনই তার বাবার মৃত্যু হয়। জন্মের পর বাবাকে দেখতে পাননি রাজেন্দ্র।
বাবা এবং মা তারকাছে একজনই। অর্থাৎ তিনিই হলেন তার মা কমলাবাই। তার প্রয়াত বাবার নাম বান্দু ভারুদ। বাবার মৃত্যুর পর তাদের সংসারে নেমে আসে প্রবল আর্থিক অনটন। রাজেন্দ্র বাবুর মা ও ঠাকুমা মিলে কোনোমতে তাদের তিন ভাইকে সংসার চালিয়ে মানুষ করেছেন। মহারাষ্ট্রের আদিবাসী এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে মহুয়া ফুল পাওয়া যায়। সেই মহুয়া ফুল দিয়ে তৈরি হয় দেশীয় পানীয়। অর্থাৎ দেশী মদ। এই দেশীয় মদ তৈরি করেই কমলাদেবী ১০০ টাকা উপার্জন করতেন, আর তাতেই চলত সংসার। মায়ের সঙ্গে মদ তৈরির কাজে সাহায্য করতেন রাজেন্দ্রও।
রাজেন্দ্র বাবু স্থানীয় জেলা পরিষদের বিদ্যালয়েই ভর্তি হন। এরপর রাজেন্দ্রপুর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা বুঝতে পারেন তিনি একজন মেধাবী ছাত্র। তারা সেই বিষয়টি তার মাকেও জানান। এরপর রাজেন্দ্র ১৫০ কিমি দূরে সিবিএসসি বোর্ডের স্কুলে ভর্তি হন। সেই স্কুল ছিল তাদের বাড়ি থেকে ১৫০ কিমি দূরে। সেই স্কুলে দূর থেকে আসা ছাত্রদের জন্য রুমের ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই অবশেষে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
স্বাভাবিক ভাবেই দশম শ্রেণির পরীক্ষাতেও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেন রাজেন্দ্র বাবু। স্কলারশিপের টাকায় চালিয়ে গেলেন পড়াশোনা, ভর্তি হলেন মুম্বাইয়ের জি এস মেডিকেল কলেজে। ডাক্তার হওয়ার চেয়েও তার বড় স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য কাজ করা। তাই সেইমতোই তিনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য। অবশেষে ২০১২ সালে ফরিদাবাদে আইআরএস অফিসার নিযুক্ত হন তিনি।
চাকরি পাওয়ার পর ফের তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৭ সালে তিনি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন শোলাপুরে। ২০১৮ সালে নন্দূর্বার জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি যে কষ্ট সহ্য করেছেন নিজের উপজাতিকে সেই কষ্ট ভোগ করতে দিতে চাননি তিনি। তাই সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য নানান ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন রাজেন্দ্র বাবু। চাকরি পাওয়ার পরেই ৪০ হাজার পরিবারকে রেশনের ব্যবস্থা করে দেন। করোনা ভাইরাসের সময় তিনি তার ব্লকে একটি উচ্চমানের চিকিৎসা কেন্দ্রও তৈরি করেন। তআই জীবনের কঠিন লড়াই ছেড়ে বেরিয়ে ভেঙে পড়েননি তিনি, বরং নিজের মেরুদন্ড টানটান রেখে লড়ে গিয়েছেন স্বপ্নপূরণের জন্য।