বাংলা সিনেমা জগতে সেরা নায়কের কথা উঠলেই সবার চোখে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে ৭০ দশকের মহানায়ক উত্তম কুমারের (Uttam kumar) ছবি। তাকে পছন্দ করতেন না সেই সময়ের এমন দর্শক পাওয়া বিরল। নাচ, গান, হাসি-কান্না, দুঃখ-আনন্দ, আর তার অনন্য অভিনয় সবমিলিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার।
তবে আজকের মহানায়ককে ব্যাপক সংঘর্ষ করতে হয়েছিল নিজের নাম বাংলা সিনেমার বুকে খোদাই করতে। নিজের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখতে তিনি অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই মহানায়ক অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়েছেন। পর পর ৭টা সিনেমা তার ফ্লপ হয়। বাক্স অফিসে তার সিনেমা গুলি মুখ থুবড়ে পরে। মহানায়ক তাতে কিছুটা ভেঙে পড়লেও হার মানেননি কখনও। এই সাতটি ছবিই ছিল কেবল তার ব্যার্থতা। এরপর তাঁর একের পর এক সিনেমা তাকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দেয়।
৭০ এর দশকে একদিকে যেমন বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নতুন নক্ষত্রের আগমন ঘটেছিলো। ঠিক অন্যদিকে, বাংলার তথা কলকাতার বুকে নকশাল গোষ্ঠীর বিপ্লবীয় আন্দোলন বর্তমান ছিল। সেই সময় উত্তাল কলকাতার বুকে হঠাৎ একদিন নিউ থিয়েটারস স্টুডিওয় শ্যুটিং চলাকালীন মেকআপ রুমে হানা দেয় নকশালরা। মহানায়কের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তারা হুমকি দেন। নায়ক ভয় পেয়ে কলকাতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যত দ্রুত সম্ভব নিজের ভোলবদল করে তিনি পাড়ি দেন মুম্বাই।
মুম্বাই তে নিজের পরিচিত অভিনেতা অভি ভট্টাচার্যের বাড়িতে ওঠেন প্রথমে। তারপর তার বাড়িতে কিছুদিন থেকে তিনি চলে যান ওপর পরিচিত অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কলকাতায় তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় অভিনেতা এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি আর কলকাতায় ফিরবেনা বলে মনস্থির করেছিলেন। তবে তার বিশ্বস্ত পরিচিত বন্ধু ও সহকর্মীদের আশ্বাসে তিনি আবারো কলকাতায় ফায়ার আসেন।
১৯৮০ সালের একটি কালজয়ী সিনেমা। নায়কের জীবনের ইতিহাসে শেষ চলচ্চিত্র হয়ে থেকে গেলো। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমাটির শ্যুটিং চলাকালীন নায়ক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেটের মধ্যেই। ১৬ ঘন্টা যুদ্ধ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি চিকিৎসকরা। চির ঘুমের দেশে পাড়ি দেন মহানায়ক। লক্ষাধিক অনুরাগীদের, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের চোখের জলে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন মহানায়ক।