মাঝে একটা রাত (পড়ুন অভিশপ্ত রাত), তাতেই মুহুর্তের মধ্যেই তোলপাড় গোটা দুনিয়া। থমকে গেল দেশের আরও এক প্রতিভাবান সঙ্গীত শিল্পীর সুরেলা সফর। কিংবদন্তি শিল্পীর প্রয়াণে গানের জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা এককথায় অপূরণীয়। গানের সাথে তাঁর আত্মার যোগ, তাই বোধহয় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে পর্যন্তও ‘গানেই ‘। গান গাইতে গাইতেই চলে গেলেন সকলের প্রিয় কেকে (KK)।
কে কে -এর এই গানের সফর শেষের ঘটনা গোটা দেশের কাছে তো বটেই কলকাতার কাছে বোধ হয় একটু বেশীই বেদনাদায়ক। কারণ মৃত্যুর আগে এদিন কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন শিল্পী। প্রতিবারের মতো এবারেও তাঁর গান মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের। কিন্তু তখন কে জানতো নিজের গাওয়া গানের কলি সত্যি করে এমন অসময়ে ‘আসছি বলে চলে গেলেন’ চিরকালের জন্য!
আসলে কে কে শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি হলেন অসংখ্য গান পাগল মানুষের আবেগের আর এক নাম, আবার কারও রাত জাগার সঙ্গীও বটে। কে কে-র প্রয়াণে ক্ষত বিক্ষত ভক্তদের মন। সকলের দেওয়া শোক বার্তায় ভরে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা। সকলেই ভাগ করে নিচ্ছেন নিজের নিজের অভিজ্ঞতার কথা। তেমনই এদিন কেকে-র প্রয়াণের পর অনেক কষ্টে নিজের ব্যক্তিগত রক্তক্ষরণের কথা জনসমক্ষে এনেছেন বাংলা কবিকবি-সাহিত্যিক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় (Srijato Banerjee)।
মর্মস্পর্শী সেই ফেসবুক পোস্টে একেবারে হৃদয় নিংড়ে শ্রীজাত ব্যক্ত করেছেন কে কে -এর সাথে তাঁর অতীতের সম্পর্কের কথা। কেউ কাওকে কতটা ভালোবাসলে যে একটানা ১৬ বছর পালিয়ে বাঁচার পরেও তাঁর জন্য এভাবে ডুকরে কেঁদে উঠতে পারেন তা শ্রীজাত-র করা ফেসবুক পোস্ট টি বিনা বাক্য ব্যয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়েই বুঝতে পারবেন। আসলে গোটা দেশবাসীর মতোই শ্রীজাতও একসময় ছিলেন কে কে র অন্ধ ভক্ত।
পুশকিন নামে তার এক ভাই ছিল। শ্রীজাত নিজে থেকেই সজ্ঞানে কে কে-কে ভালো লাগার বীজ বপন করেছিলেন, যা ক্রমশ আলো জল পেতে পেতে পরিণত হয় অন্ধ ভালোবাসায়। তারপর হঠাৎ একদিন বাইক অ্যাক্সিডেন্টে প্রাণ হারায় পুশকিন। সেই থেকে নয়নের মণি কেকে- ই হয়ে ওঠেন শ্রীজাত-র দু চোখের বিষ। তাই গত ১৬ বছর তিনি কেকে-র গানই শুনলেই সহ্য করতে পারতেন না, এই ১৬ বছরের একটা দিনও কেকে-র গান শোনেননি শ্রীজাত। সারাক্ষণ শুধু পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন।
কেকে-র অকালমৃত্যুতে নিজেকে হার ধরে রাখতে পারেননি শ্রীজাত। তাই ফেসবুকের পাতায় এদিন তিনি লিখেছেন “রাগ ছিল লোকটার উপর খুব। কখনও দেখা হলে কেঁদেকেটে ঝগড়া করার ছিল অনেকখানি। জড়িয়ে ধরবারও লোভ ছিল খুব, অভিমানে, অসহায়তায়। সেসব গানের সঙ্গেই ভেসে গেল। ‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’… গানের কথাকে একজীবনে এমন অসহ সত্যি করে দিয়ে চলে যাবার মতো মানুষ কমই আসেন পৃথিবীতে। KK তাঁদেরই একজন। ১৬ বছরের গভীর ক্ষতের উপর মলমের বদলে মশাল চেপে ধরলেন তিনি। এমনই মশাল, যার আগুনে দূরে কোথাও পুশকিনের গিটারটাও পুড়ে যাচ্ছে, একা একা।”