এককথায় অন্যরকম তিনি। তাঁর চলন-বলন, সবকিছুতেই ছাপ রয়েছে তাঁর নিজস্ব স্বত্তার। যা নিমেষেই তাকে আলাদা করে তোলে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের থেকে। কথা হচ্ছে একাধারে গায়ক তথা নায়ক শিলাজিৎ মজুমদারের (Shilajit Majumdar)। অভিনয়ে আসার পর বাংলা তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের (Rituparna Ghosh) সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তার।
এপ্রসঙ্গে একবার এক সাক্ষাৎকারে ঋতুপর্ণ ঘোষের সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন ‘আমি ঋতুকে চট করে বিশ্বাস করতাম না। ঋতু খুব ঢপ দিত। ও গল্প তৈরি করতে পারত। নিমেষে গল্প তৈরি করে দিত।’ আসলে এমন অনেকবার হয়েছিল যখন ঋতুপর্ণ ঘোষ শিলাজিৎকে বলেছিলেন কোনো একটি গল্পের বিশেষ চরিত্র সম্পর্কে। এমনকি তিনি এও বলতেন সেই বিশেষ চরিত্রটা নাকি তিনি শিলাজিৎকে ভেবেই লিখেছেন।
কিন্তু সিনেমা তৈরির সময় ওই চরিত্রে তিনি অন্য কাওকে নিতেন। উল্লেখ্য ঋতুপর্ণ ঘোষের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা ‘অসুখ’- এ কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন শিলাজিৎ। এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। এই সিনেমাতেই অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chaterjjee)।
তবে সেসময় শিলাজিৎকে ছবিতে নেওয়ার কথা জানতে পেরে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র, পরিচিতি ঋতুপর্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘শিলাজিৎ কি এই চরিত্রটা করতে পারবে?’ সৌমিত্রর এই দ্বিধার কথা জানতে পেরে প্রথমে আশাহত হয়েছিলেন শিলাজিৎ। কিন্তু সব খারাপ লাগা ভুলে শ্যুট শুরু করেন তিনি। ছবিতে সৌমিত্রের সঙ্গে খুব বেশি কাজ ছিল না তাঁর। এক দিন ঘণ্টা দুয়েকের জন্য এক সঙ্গে শ্যুট করেছিলেন তাঁরা।
এরপর ছবি মুক্তির পার্টিতে শিলাজিৎ মুখোমুখি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। সেসময় সরাসরি শিলাজিৎকে নিয়ে নিজের সন্দেহের কথা জানিয়ে সৌমিত্র নাকি নিজেই বলেছিলেন, ‘প্রথম যখন স্ক্রিপ্টটা শুনেছিলাম তখন আমার সন্দেহ ছিল, তুমি করতে পারবে কি? আমি ছবিটা দেখলাম। তুমি তো বেশ পরিণত অভিনেতাদের মতো করেছ।’ বর্ষীয়ান অভিনেতার কাছ থেকে পাওয়া এই প্রশংসা আজও ভোলেননি শিলাজিৎ। তিনি বলেন , ‘এই যে সৌমিত্রদার থেকে আমি প্রশংসা পেয়েছিলাম, এটাই আমার কাছে হাজারটা জাতীয় পুরস্কারের সমান।’