সিনেমার পর্দায় একটি ছবিকে পরিপূর্ণ রূপে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করতে যতটা কৃতিত্ব থাকে সিনেমার হিরো হিরোইনদের ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকে সিনেমায় অভিনয় করা অনান্য চরিত্রদেরও। তা সে ভিলেনের চরিত্রে হোক কিংবা অন্য কোনো সাপোর্টিং রোলে অভিনয় করা অভিনেতা অভিনেত্রীই হোক। সকলের টীম ওয়ার্ক নিয়েই তৈরি একটা গোটা সিনেমা।তাছাড়া সিনেমার ক্ষেত্রে কোনো চরিত্র যত ছোটোই হোক না কেন অনেক সময় যিনি সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার উপর নির্ভর করে সেই চরিত্রের সাফল্য। তাই কোনো চরিত্রই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বলিউডের এমনই একজন অভিনেতা হলেন শরৎ সাক্সেনা। সিনেমা প্রেমীদের কাছে বলিউডের শরৎ সাক্সেনা(Sharat Saxena)এক অন্যতম পরিচিত মুখ।তিনি তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা দিয়েছেন ভিলেনের চরিত্রে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৫ বছর ধরে অভিনয় করে চলা এই বর্ষীয়ান অভিনেতার আক্ষেপ তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে ‘পাঞ্চিং ব্যাগের'(Punching Bag) মতো ব্যবহার করেছে।
সম্প্রতি এবিষয়ে মুখ খুলেছেন এই বলি অভিনেতা। আক্ষেপের সুরে অভিনেতা বলেছেন , “যেহেতু আমি পেশীবহুল ব্যক্তি ছিলাম, তাই আমাকে সবসময় অ্যাকশন চরিত্রের কাজ অফার করা হত।নায়কাদের সাথে আমি মারধর করতাম। ‘কালা পাথর'(Kala Patthar)সিনেমায় আমি অমিতাভ বচ্চন,(Amitabh Bachhan) শশী কাপুর (Sashi Kapoor)এবং শত্রুঘ্ন সিনহা (Shatrughna Sinha) তিন নায়কের প্রত্যেকে এসে আমাকে মারধর করে, নিজেকে নায়ক হিসাবে দর্শকদের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।আমি সিনেমার পাঞ্চিং ব্যাগ ছিলাম।আর এটা আমার ৩৫ বছরের অভিনয় জীবনের গল্প।”
সেইসাথে তিনি একটি পুরনো ঘটনা প্রসঙ্গে এক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন রাজা মুরাদের(Raha Murad) বিরুদ্ধে। তিনি জানান একদিন তিনি জানতে পেরেছিলেন আমির খান (Amir Khan) তাকে ‘গোলাম’ (Golam)ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন, তবে কেউই তাঁর সাথে যোগাযোগ করেননি কারণ তারা ভেবেছিলেন যে তিনি বলিউড ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বর্ষীয়ান অভিনেতা শরৎ সাক্সেনার কথায়, ” আমির আমার নাম প্রস্তাব করার পরেও আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেননি। কারণ কেউ তাদের বলেছিল যে আমি চেন্নাইতে চলে এসেছি।আর সেই ব্যক্তি হলেন রাজা মুরাদ। তিনি এই গুজব রটিয়ে দিয়েছিলেন যে আমি আর বোম্বাইতে থাকি না। ”
বলা হয় বলিউড অভিনেতাদের বয়স বাড়ে না। সিনেমার পর্দায় নিজেকে কম বয়সী দেখাতে অনেক কসরতও করতে হয় তাঁদের। এপ্রসঙ্গে বলি অভিনেতা শরৎ সাক্সেনা জানান ‘একজন অ্যাথলিটও নিজেকে তৈরি করার জন্য দুমাস সময় পান। প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে এসে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। কিন্তু একজন অভিনেতাকে বছরের ৩৬৫ দিন নিজেকে টিপটপ রাখতে হয়। শরীরচর্চা করতে হয়। ভাবুন তো, সেটা কতটা কষ্টের!’
সেইসাথে তাঁর আরও সংযোজন , ‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে সকলেই তরুণদের স্বাগত জানান। সবাইকে ইয়ং দেখতে হতে হবে। তোমার বয়স যতই হোক না কেন তোমায় তরুণ লাগতেই হবে। যে মুহূর্তে তোমায় বৃদ্ধ দেখাবে, ওঁরা তোমায় ছুঁড়ে ফেলে দেবে। বৃদ্ধ হওয়া বলিউডে অপরাধ।’ সেইসাথে ক্ষোভ উগরে দিয়ে অভিনেতা জানান ‘বলিউডে ক’টাই বা চরিত্র বৃদ্ধ অভিনেতাদের কথা ভেবে লেখা হয়? যা লেখা হয় একমাত্র অমিতাভ বচ্চনের কথা মাথায় রেখেই! সেরা সব বৃদ্ধের চরিত্রগুলো উনিই করেন। এরপর যা টুকরো টাকরা চরিত্র পড়ে থাকে সেই ‘এঁটোকাঁটা’ আমরা পাই।’তাই নিজেকে ইয়ং দেখাতে রোজ ওয়ার্কআউট করেন তিনি।প্রতিদিন শরীরচর্চা করার পাশাপাশি চুলে কলপও করেন তিনি। যাতে পর্দায় তাঁর আসল বয়সটা না ধরা পড়ে।