ভারতের সুরসাম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar) কন্ঠের আর আর এক নাম বিস্ময়। সঙ্গীত সাধকদের বিশ্বাস স্বয়ং দেবী সরস্বতীর বাস তাঁর গলায়। যা একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকেন শ্রোতারা। রবিবার তাঁর সুরের আকাশে বিরাট নক্ষত্র পতন হয়েছে। যার ফলে আপামর দেশবাসীর হৃদয়ে তৈরি হয়েছে এক গভীর শূন্যতা। যা এককথায় অপূরণীয়। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
কিন্তু বয়স নব্বইয়ের কোটায় হলেও কোকিলের মতো তাঁর গলার মিষ্টি সুর আজও অবাক করে দেয় বিশ্বের তাবড় সঙ্গীত গুরুদেরও। শোনা যায় একসময় তাঁর গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন স্বয়ং জহরলাল নেহেরুও। তাই তাঁর মতোই অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল লতাজির এমন সুন্দর কন্ঠের আসল রহস্যটা কি। তার জন্য গবেষণার কথাও ভাবা হয়েছিল। বাইরে থেকে আর পাঁচ সাধারণ মানুষের মতো হলেও লতাজির কন্ঠ প্রকৃতপক্ষেই ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত।
যার সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখা। ঠিক কী কারণে এতটা সুরেলা ছিল ভারতীয় নাইটেঙ্গেলের কণ্ঠ তা নিয়ে সম্প্রতি নিজের মতামত জানিয়েছেন ভয়েস সেন্টারের পরিচালক স্টিভেন গিটেলস। দ্য ওয়ার্ল্ড ডট ওআরজি(the world.org)-তে প্রকাশিত একটি খবর অনুযায়ী, তিনি জানান,সুন্দর গান বা সুমধুর কণ্ঠের নেপথ্যে রয়েছে ভোকাল মাসল (Vocal Muscle)।
আসুন জেনে নেওয়া যাক আসলে কী এই ভোকাল মাসল। আসলে এই ভোকাল মাসল হল মুখের পিছন দিকে থাকা এক ধরনের বিশেষ মাংসপেশী, যা মানুষকে কথা বলতে ও গাইতে সাহায্য করে। এগুলি সাধারণত ল্যারিঙ্কস-এ থাকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ল্যারিঙ্কসকে (Larynx) ভোকাল ফোল্ডও বলা হয়। এটি সাধারণত সাদা রঙের লিগামেন্ট দিয়ে তৈরি। যা দেখতে খানিকটা ইংরেজির ২টি ‘V’ অক্ষরের মতো ।ল্যারিঙ্কসকে বলা হয় ভয়েস বক্স। এটি গলার ভিতরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যা শব্দ সৃষ্টি করে।
এটি একটি পাতলা ঝিল্লি বা মেমব্রেন দিয়ে ঢাকা থাকে। যখন কেউ গান করে কিংবা কথা বলে তখন এই সাদা রঙের লিগামেন্ট কাঁপতে শুরু করে, অর্থাৎ ভাইব্রেট হয়। যে শিল্পী যত বেশি সময় ধরে এই লিগামেন্ট ভাইব্রেট করতে পারেন তিনি তত ভাল গাইতে পারেন। আর এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মজবুত ফুসফুস। যে সঙ্গীতশিল্পীর ফুসফুস যত বেশী মজবুত হয় বায়ু মডিউলেশনের পর তার লিগামেন্ট থেকে বার হওয়া আওয়াজ তত বেশী সুরেলা শুনতে লাগে। তাই বেশীরভাগ সঙ্গীত শিল্পীরাই আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজেদের বেশকিছু অঙ্গের কার্যকরিতায় ভারসাম্য বজায় রাখেন। আর তার জন্য বছরের পর বছর রেওয়াজ করে যান তারা। ব্যাতিক্রম নন স্বয়ং লতা মঙ্গেশকরও।
আরও পড়ুনঃ অসামান্য প্রতিভা সত্ত্বেও শেষ জীবনে ভুগতে হল আর্থিক সংকটে, প্রয়াত ‘মহাভারত’ এর ভীম অভিনেতা