বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) কিংবদন্তি অভিনেতাদের নামের তালিকা যদি প্রস্তুত করা হয় তাহলে সেখানে নিঃসন্দেহে নাম থাকবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee)। নিজের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে প্রয়াণের পরেও কোটি কোটি মানুষের মনে বেঁচে আছেন তিনি। সৌমিত্র অভিনীত ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলি (Classic Bengali Movie) দেখতে বসলে সত্যিই মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই জন্যই তাঁর অভিনীত অধিকাংশ ছবিই থেকে গিয়েছে দর্শকদের মননে।
সৌমিত্র এমন একজন অভিনেতা যিনি নিজের কেরিয়ারে এমন অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন যেগুলি কোনও গল্প কিংবা উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। অভিনেতার প্রাণবন্ত অভিনয়ের মাধ্যমে সেই চরিত্রগুলিও (Soumitra Chatterjee novel characters) হয়ে উঠেছিল জীবন্ত। আজকের পর্দার ‘অপু’র জন্মবার্ষিকীতে তাঁর এমনই কিছু চরিত্র ফিরে দেখা যাক।
ফেলুদা (Feluda)- শীর্ষে ফেলুদার নাম না থাকলেই নয়। আজও ফেলুদাও কোনও সিনেমা এলে সৌমিত্রর অভিনয়ের তুলনা টানা হয়। অভিনেতাকে এই আইকনিক চরিত্রে এতটাই মানিয়েছিল যে দেখে মনে হতো যেন সত্যিই সত্যজিৎ রায়ের বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘সোনার কেল্লা’- সৌমিত্রর হাত ধরেই প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল ফেলুদার চরিত্রে।
অপু (Apu)- ‘অপুর সংসার’এর মাধ্যমে এই কিংবদন্তি অভিনেতার পথচলা শুরু হয়েছিল। আজও আপামর বাঙালির মনে গেঁথে রয়েছে এই সিনেমা। এই ছবির হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছিল দুই কিংবদন্তি, সত্যজিৎ এবং সৌমিত্রর জুটি। ‘অপুর সংসার’এ সৌমিত্র-শর্মিলা জুটির রসায়ন দেখলে এখনও মুগ্ধ হন প্রত্যেকে।
তিন ভুবনের পারে (Teen Bhubaner Pare)- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের এই ছবিটির হাত ধরেই ঘুরে যায় সৌমিত্রর কেরিয়ারের মোড়। সুবীরের চরিত্রে তাঁর অভিনয় এখনও গেঁথে রয়েছে দর্শকমনে। এই সিনেমার ‘জীবনে কী পাবো না’ গানটি তো এখনও প্রায়ই শোনা যায় মানুষের মুখে।
দেবদাস (Devdas)- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ হিসেবেও দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন সৌমিত্র। এই ছবিতে চুনিবাবুর চরিত্রে উত্তম কুমার, পারোর চরিত্রে সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমুখীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুপ্রিয়া দেবী।
ঝিন্দের বন্দি (Jhinder Bondi)- তপন সিংহের এই ছবিতে ময়ূর বাহনের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্রকে। তিনি যে কোন মাপের অভিনেতা তা বোঝা গিয়েছিল এই সিনেমায়। প্রসঙ্গত, ‘ঝিন্দের বন্দি’তে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র।
সাত পাকে বাঁধা (Saat Pake Badha)- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা সেন। অভিনেতার কেরিয়ারের অন্যতম কালজতী ছবি এটি। অজয় কর পরিচালিত এই সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৩ সালে।
কোনি (Koni)- মতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এই সিনেমা। চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা পরে ক্ষিদ্দার মুখে ‘ফাইট কোনি ফাইট’ সংলাপটি আজও ভেসে ওঠে দর্শকদের চোখের সামনে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সিনেমায় সৌমিত্রর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রত্যেকে।
চারুলতা (Charulata)- এই ছবির হাত ধরে সৌমিত্র পেয়েছিলেন ব্যাপক সাফল্য। ছবিতে মাধবী মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর অভিনয় দারুণ পছন্দ হয়েছিল দর্শকদের। অমলের চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে উঠেছিল সৌমিত্রর ছোঁয়ায়।
দ্য বেঙ্গলি নাইট (The Bengali Night)- মিরকা এলিয়েডের লেখা ‘বেঙ্গল নাইটস’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। এখানেও সৌমিত্রর অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের।
অরণ্যের দিনরাত্রি (Aranyer Din Ratri)- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭০ সালে। অসীমের ভূমিকায় সৌমিত্রর অভিনয় দারুণ পছন্দ হয়েছিল প্রত্যেকের।
ক্ষুধিত পাষাণ (Khudito Pashan)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল এই সিনেমা। টলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’।
মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্রকে। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ে প্রাণসঞ্চার হয়েছিল এই ছবিতে। আজও দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে এই ছবি।