গতকাল পৃথিবীর আকাশে সন্ধ্যাতারা জ্বলে ওঠার কিছু পরেই আচমকা নক্ষত্র পতন হয় সুরের আকাশে। প্রয়াত হন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। তিনিই ছিলেন বাংলার গীতশ্রী, এবং বঙ্গ বিভূষণ। স্বর্ণ যুগের সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম কিংবদন্তী গায়িকা ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু বাংলার সঙ্গীত জগতে তৈরি করেছে এক গভীর শূন্যস্থান। যা এককথায় অপূরণীয়। মৃত্যু কালে এই কালজয়ী শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
জানা যায় দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান গায়িকা। বেশকিছুদিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন গীতশ্রী। গতকাল সন্ধ্যার কিছু পরেই চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে কলকাতার অ্যপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মাতৃসম এই বর্ষীয়ান সঙ্গীত শিল্পীর প্রয়াণে কার্যত শোকস্তব্ধ বাংলার মানুষ।
কিংবদন্তি গায়িকা হিসাবে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেও নাম-যশ-খ্যাতির দম্ভ কখনও ছুঁতে পারেনি গায়িকাকে। তাই তিনি শিল্পী হিসাবে যত বড় মাপের মানুষ ছিলেন, মানুষ হিসাবে তাঁর মনটা ছিল আরও বড়। জীবনে কোনো আড়ম্বর কেই আশ্রয় দেননি গায়িকা। বরং আদ্যোপান্ত একজন মাটির মানুষ হয়েই গোটা জীবন কাটিয়েছেন গায়িকা।
তিনি উদার মনের শিল্পী ছিলেন যে সুর, তালের গন্ডগোল সত্ত্বেও নতুনদের বরাবরই গান গাওয়ার উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। এমনকি নতুন প্রজন্মের গায়ক গায়িকাদের খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি তিনি নিজে থেকেই ফোনালাপও করতেন। এছাড়াও জানলে হয়তো অনেকেই অবাক হবেন এই বয়সে এসেও যিনি এত সুন্দর সুরের ঝঙ্কার তুলতেন আদতে তিনি এককানে শুনতেই পেতেই না।
জানা যায় ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটা দুর্ঘটনার জেরে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন শিল্পী। মাথায় ইঁট এসে পড়ার পর প্রাণ বেঁচে গেলেও এই সময়েই কানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল গীতশ্রীর। এরপর হঠাৎ একসময় মাম্পস হয় তাঁর। একসময় অসুখ সেরে সেরে গেলেও চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে যায় ডান কান। তারপর থেকে ঈশ্বর প্রদত্ত এক আশ্চর্য ক্ষমতার জেরেই এককানে শুনেই গানের ভুবন ভরিয়ে দিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।