মহামারিকালে বছরের শুরুতেই বাংলা বিনোদন জগতের ছটফটে, হাসিখুশি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার (Oindrila Sharma) ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার খবর মনখারাপ করে দিয়েছিল সকলের। আর সেই শুরুর দিন থেকেই জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে তাঁর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন তাঁর প্রেমিক তথা সকলের প্রিয় ‘বামাক্ষ্যাপা’ ওরফে সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। মাঝে মধ্যে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐন্দ্রিলার বর্তমান শারীরিক অবস্থার নানান আপডেট দিয়ে থাকেন।
আগেও ঐন্দ্রিলার অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মনের জোরের প্রশংসা করেছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অসুস্থ প্রেমিকাকে নিয়ে যেভাবে একের পর এক ভুয়ো খবর রটানো হচ্ছে তাতে রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। তবে এসব ভুয়ো খবর দেখে প্রথমে স্বাভাবিকভাবেই প্রচন্ড রাগ হলেও পরে ঐন্দ্রিলার লৌহ কঠিন মনোবল দেখে নিজেকে সামলে নিয়েছেন তিনি। তাই এইসব নিন্ম রুচির মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েও ক্ষোভ কিংবা বিরক্তি নয় সব্যসাচীর লেখার ছত্রে ছত্রে ধরা দিয়েছে আবেগ।
শুক্রবার রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছিলেন সব্যসাচী। সেখানে তিনি ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে লিখেছেন ‘জুলাই মাসটা বেশ সঙ্কটপূর্ণ ছিল ঐন্দ্রিলার কাছে। ২৫ টা রেডিয়েশন এই মাসেই দেওয়া হয়েছে, একই সঙ্গে চলেছে কেমোথেরাপি। ঘটেছে ওষুধপত্রেরও অদলবদল। এত কিছু ধকলের মাঝে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। কমেছিল দেহের শ্বেতকণিকার পরিমাণও। শরীর এতটা অসাড় হয়ে গিয়েছিল যে বাথরুমে যাওয়ার ক্ষমতাও হারিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।মায়ের সাহায্য ছাড়া কোনো কাজই করতে পারতো না। প্রসঙ্গত বলি, ওর বাবা এবং দিদি পেশায় ডাক্তার এবং মা পেশায় নার্সিং স্টাফ। এটা যে ওর জন্য কত বড় আশীর্বাদ, তা আমি বেশ বুঝি। তবে সমস্ত দুর্বলতা সামলে ও এখন সুস্থ আছে, প্রচন্ড খুশি যে রেডিয়েশন শেষ, তবে কেমো চলবে নভেম্বর অবধি।’
এর পরেই ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে একের পর এক ভুয়ো পোস্ট সম্পর্কে সব্যসাচী লিখছেন, “আমি জানি যে ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে ওঠা প্রচুর ইউটিউব চ্যানেল আজকাল নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। তাদের অধিকাংশেরই কাজ বিভিন্ন অভিনেতার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ঘেঁটে মুখরোচক ছবি এবং তথ্য জোগাড় করে তা উপস্থাপনা করা। আমি এও জানি যে আমার লেখা তারা নিয়মিত পড়ে এবং সেটাকেই গড়গড় করে পড়ে শুনিয়ে, কটা ছবি লাগিয়ে ভিডিও বানায়। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, আমি দেখিও না। তবে ঐন্দ্রিলা সব দেখে, সব কটা। শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাঁটা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই তো।’
এরপরেই সেইসব ভুয়ো পোস্টের প্রসঙ্গ টেনে এনে একের পর এক উদাহরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন ‘মাঝেমধ্যেই আমায় বিভিন্ন ভুলভাল জিনিস দেখায়’। তারমধ্যে ঐন্দ্রিলার চিকিৎসার খরচ জোগানোর টাকা কখনও মিঠুন চক্রবর্তীর দান তো কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দান বলেও যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি বলা হয়েছে অসুস্থতা কাটিয়ে শুটিং শুরু করে দিয়েছেন অভিনেত্রী। তবে সেদিন সব্যসাচীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় যেদিন দুর্বল শরীর নিয়ে জানালার ধারে শুয়ে ঐন্দ্রিলা সব্যসাচীকে এ হেন এক ইউটিউব চ্যানেলের ‘নিউজ’ দেখিয়ে বলেন, ‘এই দেখো, তিন মাস আগে, আমি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছি।’ এ প্রসঙ্গে সব্যসাচী লিখেছেন, ‘বুকটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। মানুষ এত নিচ, এত বর্বর।’ যদিও ঐন্দ্রিলা ভেঙে পড়েননি। সব্যসাচীকে বলেছেন, ‘আহা, রাগ করছো কেন ? এসব ভিডিও না বানালে লোকে দেখবে না তো। ওদেরও তো খেতে পড়তে হবে।’