বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee)। শোনা যায়, তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে ঘাম ছুটে যেত খোদ ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের (Uttam Kumar)। যখন বাংলা ভাগ হয় সেই সময় পরিবারের সঙ্গে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন টলিপাড়ার এই নামী অভিনেত্রী। অভাবের সংসারে দশজন সন্তানের পেট চালাতে হিমশিম খেয়ে যেতেন সাবিত্রীর বাবা।
তবে অভাবের সংসারে থাকলেও প্রতিভার কোনও খামতি ছিল না সাবিত্রীর মধ্যে। তাঁর মধ্যেকার সেই সুপ্ত প্রতিভাই চিনে নিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার আর এক কিংবদন্তি শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (Bhanu Bandyopadhyay। একদিন স্কুলে যাতায়াতের পথে সাবিত্রীর সামনে অভিনয়ের প্রস্তাব রেখেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘আমরা একটা থিয়েটার করছি। তুমি কি তাতে পার্ট করবে?’
ভানুর মুখ থেকে একথা শুনে সাবিত্রী সাফ বলেন, ‘এসব আমায় কেন বলছেন? আমার বাবার সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন’। মেয়ের অভিনয়ে সমস্যা ছিল না বাবার। সাবিত্রী যেদিন প্রথম থিয়েটার করতে যান সেই দিন তকে জুতো কিনে দিয়েছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসারে এতখানি অভাব ছিল যে পড়শির থেকে ধার করে শাড়ি এনে নাচের শো করতেন অভিনেরী।
সাবিত্রীর নাটক দেখেই তাঁকে পছন্দ করেছিলেন ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমার। এপর তিনি নিজে এসে অভিনেত্রীকে নাটকের দলে কাজের অফার দেন। সেই সময়ও তিনি বলেছিলেন বাবার সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে। সাবিত্রীর কথায় রাজি হয়ে যান উত্তম কুমার। অভিনেত্রীর বাবার শর্ত ছিল, উত্তম কুমারকে নিজে এসে সাবিত্রীকে পৌঁছে দিয়ে যেতে হবে।
এরপরই সাবিত্রীর বাবার ‘মহানায়ক’এর কাছ থেকে অ্যাডভান্সের টাকা চেয়ে বসেছিলেন। আর তাতেই লজায় মাথা নীচু হয়ে গিয়েছিল অভিনেত্রীর। যদিও অভিনেত্রীর বাবা সাফ বলেছিলেন, যেখানে ঠিক করে তাঁদের সংসার চলে না, সেখানে কাজ করলে টাকা চাইলে দোষ কোথায়? সাবিত্রী জানান, এভাবেই ছোট থেকে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি।
শোনা যায়, উত্তম কুমারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁকে মন দিয়ে ফেলেছিলেন সাবিত্রী। তবে অভিনেত্রী কারোর সংসার ভাঙতে চাননি। সেই জন্যই উত্তম কুমার-গৌরী দেবীর মাঝখানে এসে দাঁড়াননি তিনি। চিরকাল একাই থেকেছেন। সন্তানসম বোনেদের বিয়ে দিলেও সাবিত্রী অবিবাহিতাই থেকেছেন।