পৃথিবীর সমস্ত সফল ব্যাক্তিদের সাফল্যের পিছনেই থাকে একটা লম্বা চড়াই উতরাইয়ের কাহিনী। ব্যাতিক্রম নন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ডান্স কোরিওগ্রাফার রেমো ডিসুজাও (Remo D’Souza)। এম জে অর্থাৎ নাচের জাদুকর মাইকেল জ্যাকসনের ( Michael Jackson) অন্ধ ভক্ত তিনি। ছোটো থেকে তাঁকে দেখেই নাচের প্রতি এক অদ্ভুত দুর্বলতা তৈরি হয় রেমোর। জ্যাকসনের নাচের ভিডিও দেখে দেখেই তাঁকে কখন যেন নিজের গুরু মেনে নিয়েছিলেন রেমো। তাই তাঁর নৃত্যভঙ্গিমার অনুকরণ করে তার সঙ্গে নিজের নাচের স্টেপ মিলিয়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব ডান্স ফর্ম। তবে তখনকার দিনে নাচের মতো একটা বিষয় কে পেশা করে সফল কোরিওগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন দেখা মুখের কথা ছিল না। তাই মোটেই মসৃণ ছিল না রেমোর বলিউড যাত্রার পথও। রমেশ গোপী থেকে তাঁর আজকের রেমো ডিসুজা হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে এক বর্ণময় যাত্রাপথ।
রেমোর জন্ম ১৯৭৪ সালের ২ এপ্রিল। । আদতে কেরলের বাসিন্দা রেমোর জন্মগত নাম রমেশ গোপী। পরে তাঁর পরিবার পরে চলে আসে গুজরাতের জামনগরে। উল্লেখ্য রেমোর বাবা ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার রাঁধুনি।পরিবারের সবার আশা ছিল রেমো বড়ো হয়ে পাইলট, কিংবা ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু ততদিনে নাচের নেশায় বুঁদ রেমো ঠিক করে নিয়েছে বড়ো হয়ে সে নৃত্যশিল্পীই হবে। কিন্তু বাড়িতে তার কথা কেউ শুনতেই রাজী ছিলেন না। তবে শেষপর্যন্ত রেমোর মা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর পাশে। ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনিই তাঁকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন জামনগরের একটি নাচের স্কুলে।
কিন্তু ধীরে রেমো অনুভব করতে শুরু করলেন এইভাবে চলবে না। কোরিওগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তাঁকে মুম্বাই যেতে হবে। এরপর মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়েই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে স্বপ্নের মুম্বাই পাড়ি দিলেন। প্রথমে সেখানে এক পরিচিতের বাড়ি গিয়ে থাকতে শুরু করেন। এর পর কয়েক দিনের মধ্যেই নাচের স্কুল শুরু করেন। কিন্তু একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যাপক অর্থসংকটে তাঁর জীবনের চরম কষ্টের দিন গুলো কাটে রেলস্টেশনের বেঞ্চে।সেসময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কস্টিউম ডিজাইনার লিজেলের সেখানে থেকেই তাঁদের প্রেম এবং বিয়ে। আজ অবশ্য সেই কঠিন লড়াইয়ের সুফল ভোগ করছেন তাঁরা। ছেলে ধ্রুব, এবং গ্যাব্রিয়েল কে নিয়ে সুখের সংসার তাঁদের।
স্ট্রাগল করার দিন গুলোতে একসময় রেমো সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু করে দেখাবেন। কিন্তু তথাকথিত সুদর্শন না হওয়ায় বারবার, ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে এক বন্ধুর সাহায্যে রেমোর আলাপ হল বিখ্যাত কোরিয়োগ্রাফার আহমেদ খানের সঙ্গে। সেখানেও প্রথমবার ভাগ্য না খুললেও দ্বিতীয় অডিশনে রেমো কে পছন্দ হয়ে যায় আহমেদ খানের।
আহমেদ খানের সাথে কাজ করার সুবাদেই তাঁর পরিচয় হয় পরিচালক রামগোপাল বর্মার সাথে। সে সময় ‘রঙ্গিলা’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। এছাড়া ওই সিনেমার একটি দৃশ্যে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।এরপর ‘আফলাতুন’-এ অক্ষয়কুমারের সঙ্গেও তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে এবং ‘পরদেশ’-এ শাহরুখের ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে কাজ করেছিলেন রেমো।পরবর্তীতে সোনু নিগমের ‘দিওয়ানা’র মিউজিক ভিডিয়ো-তে কোরিয়োগ্রাফি নজরে আসেন তিনি।এছাড়াও একক কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে ‘দিল পে মত লে ইয়ার’-এও কাজ করেছেন তিনি।
জানা যায় বলিউডে স্ট্রাগল করার সময় এক গির্জায় যেতেন রেমো। একসময় তাঁর মনে হয়েছিল ধর্মান্তরিত হলে তিনি মানসিক শান্তি খুঁজে পাবেন।তাই পরিবারের অনুমতি নিয়ে নতুন ধর্ম গ্রহণ করে রমেশ গোপী থেকেই তিনি রাতারাতি হয়ে যান রেমো ডি’ সুজা। তাঁর বিশ্বাস, তাঁর এই নতুন নাম তাঁর সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।অভিনয়, কোরিওগ্রাফি ছাড়াও সিনেমাও পরিচালনা করেছেন রেমো। নাচকে বিষয়বস্তু করে ২০১০-এ তিনি পরিচালনা করেন ‘ফালতু’।এর তিন বছর পরে তিনি পরিচালনা করলেন ‘এবিসিডি’ (Any body can dance) ।পরে ‘এবিসিডি’ সিরিজের আরও ছবি পরিচালিত হয়েছিল।