‘অগ্নিপরীক্ষা’ থেকে ‘বসু পরিবার’ তারপর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সবতেই তাঁদের স্মৃতি একেবারে একত্র হয়ে আছে। সুপ্রিয়া দেবীর স্মৃতি অনুযায়ী তিনি শেওড়াফুলির এক প্রেক্ষাগৃহে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দেখতে গিয়ে প্রথম উত্তম-সুচিত্রাকে দেখেন। অবশ্য, তত দিনে দুজনকেই চেনা হয়ে গিয়েছে তাঁর। কারণ সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমারের প্রথম ছবি ‘বসু পরিবার’-এর কাজ একেবারে হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে কাজের জন্যই দেখা করতে গিয়ে ‘বসু পরিবার’-এর পরিচালক নির্মল দে-র আলাপ করিয়ে দিয়েছেন সুচিত্রার। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির শ্যুট চলছিল সে সময়। নির্মল দে আলাপ করিয়ে দেন সুচিত্রার সঙ্গে সুপ্রিয়ার। এইদিন থেকেই শুরু হয়েছে। এর পরে সময় এগিয়েছে আর এগিয়েছে সময়ের দোলাচল। উত্তম আর সুপ্রিয়া একে অপরকে চিনেছেন গভীরভাবে।
আসলে ধরেই নেওয়া হয় তাঁদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে সাদা-কালোয় না দেখে মাঝের রঙিন, ধূসর দিকেও আলো ফেলা যেতে পারে। আবার, উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করা অভিনেতা অনুপ কুমার অবশ্য জানিয়েছিলেন, উওত্তম-সুপ্রিয়া দুজন এতটাই বন্ধু ছিলেন যে দুজনের ইগো কখনও বাইরে প্রকাশ পেতো না। এমনকি দুজন ঝগড়া করেছেন এমন কখনও দেখা যায়নি।
বারবার সিনেমাপ্রেমী বাঙালীর মনে প্রশ্ন উঠেছে সুপ্রিয়া আর সুচিত্রা কী একে অপরকে ঈর্ষা করতেন? কিন্তু বাংলা ছবির দর্শকের অনেকেই জানেন না আসলে এঁরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করতেন। ভালবাসতেন। সুচিত্রা ব্যক্তিগতভাবে সুপ্রিয়াকে পছন্দ করতেন তা একেবারে পরিষ্কার। আর সুপ্রিয়াকে তাঁর ‘রমাদি’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি অভিনেত্রীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা তুলে ধরেছেন।
টলিপাড়ায় শোনা যায় আরো এক মজার গল্প। এক দিন নাকি তিলোত্তমা জুড়ে বৃষ্টি। ময়রার স্ট্রিটের বাড়িতে ফোন করে বসলেন ‘ইন্দ্রাণী’ ছবির নায়িকা। সুপ্রিয়ার গলা পেয়ে বললেন, ‘‘উতু কোথায়? (ওই নামেই উত্তম কুমারকে ডাকতেন।)’’ সুপ্রিয়া দেবী কথায় কথায় জানালেন উত্তম বাড়িতে নেই, শ্যুটে আছেন। হতাশ সুচিত্রা থাকতে না পেরে সুপ্রিয়াকে বললেন, ‘‘ইশ! শ্যুটিংয়ে গিয়েছে? উতুকে এখন ভীষণ চুমু খেতে ইচ্ছে করছিল।’’
আবার সুপ্রিয়া দেবীও এই কথা শুনে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে নাকি বলেছিলেন উত্তমকে তিনি জানিয়ে দেবেন শ্যুট শেষ হলেই সুচিত্রার বাড়ি চলে যেতে। অবাক হয়ে যান সুচিত্রা। কেন বিচলিত হলেন না সুপ্রিয়া? এই প্রশ্নে সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘রমাদি তোমাকে আমি খুব ভাল করে চিনি।’’ আকস্মিক আড়ালে চলে যাওয়া বাংলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে যে বেশিরভাগ দশর্কই চিনতে ভুল করেছিলেন তা বলাই যায়। এই বুধবার নায়িকার জন্মদিন।