উত্তম কুমার (Uttam Kumar), বাংলা সিনেমার মহানায়ক (Mahanayak) বলতে এই নামটাই সবার আগে ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মহানায়ককে সকলে উত্তম কুমার নাম চিনলেও তাঁর আসল নাম হল অরুণ কুমার চ্যাটার্জী (Arun Kumar Chatterjee)। ১৯৪৮ এ ‘দৃষ্টিনন্দন’ ছবি দিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন উত্তম কুমার। শুরুর দিনে নিজের অরুণ কুমার নাম দিয়েই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু কেরিয়ারের প্রথমদিকে পরস্পর বেশ কিছু ছবি ফ্লপ হয়েছিল। যার ফলে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ নামের ছবিতে নিজের ফিল্মি নাম পরিবর্তন করে রাখেন উত্তম কুমার।
পরিবর্তিত নামে শুরু হয় নতুন করে যাত্রা। পঞ্চাশের দশকেই ৫০টিরও বেশি ছবি করেন উত্তম কুমার কিন্তু ছবি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হলেও সেভাবে পরিচিতি পাননি মহানায়ক। এরপর হারানো সুর, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, সাগরিকা এর মত ছবি করে ষাটের দশকে খানিক পরিচিতি পেতে শুরু করেন। এমনকি ছবি সফল হওয়ার কারণে সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi) থেকে শুরু করে সুচিত্রা সেনের (Suchitra Sen) মত অভিনেত্রীদের সাথে রোমান্টিক দৃশ্যেও অভিনয়ের সুযোগ পান মহানায়ক।
শুধুই যে ছবিতে অভিনয় তা নয়, অভিনয়ের পাশাপাশি ছবির গানও গাইতেন নিজেই। পৃথিবী বিখ্যাত পরিচালক সত্যজির রায়ের সাথেও কাজ করেন উত্তম কুমার। নায়ক, চিড়িয়াখানার মত সিনেমায় নিজের অভিনয়ের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন উত্তম কুমার। এরপর বাংলা ছবির জগৎ থেকে হিন্দি সিনেমার জগতে পা রাখেন তিনি। বলিউড (Bollywood) যাত্রার শুরুতেই ‘এক ছোটি সি মুলাকাত’ ছবি প্রযোজনা করেন। ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে ছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী বৈজন্তীমালা (Yyjayanthimala)। কিন্তু বলিউড ছবিতে মুখ ধুবড়ে পড়েন মহানায়ক।
বলিউডের ছবিটির ব্যর্থ হওয়াতে অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। কিভাবে বাংলার এক দক্ষ ও সফল অভিনেতা এভাবে মুখ থুবড়ে পড়েন বলিউড তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে ঢের। কেউ বলেন বৈজন্তীমালা সহযোগিতা করেননি উত্তমকুমারের সাথে। তো কারোর মতে বৈজন্তীমালার সাথে সম্পর্কের দ্বন্ধের কারণেই ফ্লপ হয়েছিল ছবিটি। উত্তম ও বৈজন্তীর সম্পর্কের তিক্ততার কারণ অবশ্য ছিল পরিচালক হেমন্তু মুখোপাধ্যায়ের (Hemanta Mukhopadhyay) ছবিতে অভিনয়ের কথা দিয়েও না আসা।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘বিস সাল বাদ’ ছবিতে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। ছবি সুপারহিট হয়, এরপর ‘শর্মিলি’ নামের ছবিতেও উত্তম কুমারের থাকার কথা হয়। কিন্তু ছবির সমস্ত কিছু রেডি থাকলেও ছবির সেটা হাজির হননি মহানায়ক যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। এরপরেই উত্তম কুমার ও হেমেন্ট মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়, যেটা মহানায়কের কেরিয়ারে প্রভাব ফেলেছিল।