অবসর সময়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে কিন্তু বাংলা সিরিয়ালের (Bengali Serial) জুড়ি মেলা ভার! বাংলা সিরিয়ালের সাথে দর্শকদের সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। বহুদিন ধরেই টেলিভিশনের পর্দায় মেগা সিরিয়াল দেখে আসছেন বাংলার দর্শকরা। তবে আগে যেমন টিভি চালের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা তেমনি সিরিয়ালও ছিল কয়েকটা মাত্র। আর এখন টিভি খুললেই যেমন চ্যানেলের ছড়াছড়ি তেমনই একের পর এক বিনোদন মূলক চ্যানেলে চলতে থাকে সিরিয়ালের মেলা।
তবে ইদানিং মেগা সিরিয়ালের ক্ষেত্রে একটা ট্রেন্ড ভীষণ নজর কাড়ছে সকলেরই। এখনকার দিনে যেকোনো সিরিয়ালেরই মেয়াদ থাকছে খুবই অল্প সময়ের জন্য। সিরিয়াল শুরুর অল্প দিনের মধ্যেই শেষ করে দেওয়া হচ্ছে জনপ্রিয়। বদলে আসছে একঝাঁক নতুন সিরিয়াল। তা সে স্টার জলসা হোক কিংবা জি বাংলা একই কথা খাতে কালার্স বাংলা কিংবা আকাশ আটের মতো চ্যানেল গুলির ক্ষেত্রেও।
দর্শকমহলে ভালো রকমের জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল স্টার জলসার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘খুকুমণি হোমডেলিভারি’। সেইসাথে একে একে বন্ধ হয়েছে ‘খড়কুটো’, ‘মোহর’-এর মতো একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়াল। মাত্র তিন মাসের মাথায় শেষ করে দেওয়া হয়েছিল একেবারে ভিন্ন স্বাদের সিরিয়াল বৌমা একঘর। স্লটলিডার হয়েও গতকাল টিভির পর্দায় শেষ বারের মতো সম্প্রচারিত হয়ে মাধবীলতা। এছাড়া আগামী ১১ তারিখেই দেখানো স্টার জলসার বেঙ্গল টপার সিরিয়াল ‘ধূলোকণা’র অন্তিম পর্ব।
একই দৃশ্য জি বাংলাতেও। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে এই চ্যানেলের জনপ্রিয় সিরিয়াল পিলু। একমাসের মধ্যেই চ্যানেলে শুরু হয়েছে একাধিক নতুন নতুন সব সিরিয়াল। যার ফলে বিদায় নিয়েছে রহস্য রোমাঞ্চে মোড়া ভিন্ন স্বাদের সিরিয়াল ‘লালকুঠি’। এছাড়াও প্রায় শেষের পথে জি বাংলার ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এবং ‘উড়ন তুবড়ি’র মতো সিরিয়াল। ব্যতিক্রম নয় নতুন চ্যানেলও। একটি চ্যানেলে ‘আমার সোনা চাঁদের কণা’ চলেছে চার মাস। আবার কালার্স বাংলার সিরিয়াল ‘মৌয়ের বাড়ি’ও চলেনি বেশি দিন।
কিন্তু অতীত ঘাঁটলেই দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র।একসময় টিভি চ্যানেল বলতে ছিল দূরদর্শন। সেসময় একেকটা ধারাবাহিক চলতো বছরের পর বছর। তাই এখনও দর্শকদের চোখে লেগে রয়েছে ‘জননী’, ‘জন্মভূমি’, ‘খেলা’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’র মতো সিরিয়াল। উদাহরণ রয়েছে বাণিজ্যিক বাংলা চ্যানেলের ক্ষেত্রেও। একসময় দর্শকমহলে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘এক আকাশের নীচে’ সিরিয়াল। যা দেখতে অতিক্রম করেছিল হাজার পর্ব।এছাড়া ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’ তো আছেই।
তাই সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এখনকার বাংলা সিরিয়াল গুলি নিতান্তই স্বল্পায়ু। যার মূল কারণ (Reason) হিসেবে উঠে আসছে টিআরপির (TRP)খেলা। প্রতি সপ্তাহের টিআরপি রেজাল্টই এখনকার সিরিয়ালের জনপ্রিয়তার সূচক। যার ওপর নির্ভর সিরিয়ালের আয়ু। একই মোট বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত অভিনেতা অভিনেত্রীদের। এপ্রসঙ্গে বিদীপ্তা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘আগের অভিনেতারা এখনো অভিনয় করেন। কিন্তু আসল হচ্ছে গল্প, চিত্রনাট্য। সেটা খারাপ মানের হলে অভিনেতারা কী করবেন?’
অন্যদিকে বাংলার জনপ্রিয় সব সিরিয়ালের লেখিকা লীনা গাঙ্গুলী খানিকটা ভিন্ন মোট পোষণ করে বলেছেন ‘দর্শকের এখন আর আগের মতো ধৈর্য নেই। তাদের সামনে বিনোদনের অনেক বিকল্প। তাই তারা যতদিন দেখবেন, ততদিন সিরিয়াল চলবে। অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরাও এটা জানেন। এই অনিশ্চয়তা অন্য কাজের ক্ষেত্রেও আছে।’