সদ্য বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছে রানী মুখার্জি, অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ (Mrs Chatterjee vs Norway) ছবিটি। বাঙালি কন্যা সাগরিকা চক্রবর্তীর (Sagarika Chakraborty) জীবনকাহিনীও ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এই সিনেমা মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। প্রশংসায় পঞ্চমুখ বলিউড সেলেবরাও। শাহরুখ খান, কাজলের মতো তারকারা এক মায়ের লড়াই দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন। তবে বাস্তবের ‘মিসেস চ্যাটার্জি’র (Mrs Chatterjee) লড়াই কিন্তু এখনও থামেনি। এখনও সন্তানদের থেকে আলাদাই থাকতে হয় তাঁকে।
সন্তানদের কাছে পাওয়ার জন্য একসময় নরওয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সাগরিকা। ২০১২ সাল থেকে লড়াই চলছে তাঁর। আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে সন্তানদের কাছে ফিরে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ততদিকে চিড় ধরেছে অনুরূপ এবং সাগরিকার সংসারে। আপাতত স্বামীর থেকে আলাদা থাকেন বাস্তবের ‘মিসেস চ্যাটার্জি’। ছেলে-মেয়ের খুশির জন্য তাঁদের থেকেও দূরে থাকতে হয় তাঁকে।
সম্প্রতি এই সময় ডিজিটালের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাগরিকা দুঃখ করে বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য এক টাকাও দেয় না। নরওয়ে থেকে দেশেও ফিরে আসেনি। বিয়ের আগে আমি এমবিএ করেছিলাম। ছবিতে অনেকেই ছেলেমেয়েদের ফিরে পাওয়া পর্যন্ত লড়াইটা দেখতে পাবেন। তবে এরপর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যেও আমায় একটা লড়াই লড়তে হয়েছিল’।
সাগরিকার কথায়, অভিজ্ঞান এবং ঐশ্বর্যকে ফিরে পাওয়ার পর তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। সফটওয়্যার নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি জানান, তাঁর বাবার হৃদয়ের রোগ রয়েছে, সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর খরচ আছে। টাকার প্রয়োজনে তাই বাধ্য হয়ে কলকাতার বাইরে চলে আসেন তিনি। এতদিন নয়ডাতে চাকরি করছিলেন বাস্তবের ‘মিসেস চ্যাটার্জি’। তবে এখন কাজের জন্য পুনেতে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। মায়ের থেকে দূরে দাদু-ঠাকুমার কাছেই বেড়ে উঠছে অভিজ্ঞান এবং ঐশ্বর্য।
সাক্ষাৎকারে স্বামী অনুরূপের বিরুদ্ধেও একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সাগরিকা। তাঁর দাবি, সন্তানদের মানুষ করার জন্য কোনও সাহায্য করেননি অনুরূপ। পাশাপাশি সিনেমায় মারধর করার যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা নাকি বাস্তবের চেয়ে অনেক কম। সাগরিকা বলেন, বাস্তবে আমায় আরও অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে’।
অপরদিকে আবার সম্প্রতি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিটিতে ‘কাল্পনিক’ তকমা দিয়েছেন ভারতে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত। তাঁর দাবি, নরওয়েতে আর্থিক কারণের জন্য কোনও মায়ের কোল থেকে সন্তানকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় না। এই প্রসঙ্গে সাগরিকা বলেন, ছবিতে যা দেখানো হয়ে তা সম্পূর্ণ সত্যি। এখনও তাঁর কাছে আদালতের সমস্ত নথি রয়েছে। পাশাপাশি এই জানান, ঐশ্বর্য সেই সময় অনেক ছোট ছিল। কিন্তু অভিজ্ঞানের মনে সেই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়েছিল। এখনও সে মাঝেমধ্যে জেদ করে, খেতে চায় না। তাঁকে মারধর করা হয়েছিল কিনা সেই নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন সাগরিকা। তবে সেই ঘটনার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও নরওয়ে সরকার তাঁর কাছে কোনও ক্ষমা চায়নি বলে জানান ‘মিসেস চ্যাটার্জি’।