বাঙালির অদ্বিতীয় ম্যাটিনি আইডল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে একসময় দেখে রুপোলী পর্দায় মহানায়ক গান গেয়েছিলেন, “এবার ম’লে সুতো হব, তাঁতির ঘরে জন্ম লব”….. মান্না দে’র গাওয়া এই অনবদ্য গানে উত্তর-সাবিত্রী জুটিকে আজও ভুলতে পারেনি বাঙালি। এই দু’দিন আগেই ভাষা দিবসের দিন পালিত হল তাঁর জন্মদিন। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পদার্পণ করেছিলেন তিনি। তারপর সিনেমা জগতের সঙ্গেই পা মিলিয়ে চলতে চলতে কাটিয়ে ফেলেন দশকের পর দশক।
উল্লেখ্য, সাল ১৯৭৪, প্রয়াত পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘মৌচাক’ ছবিতে অভিনয়ের ডাক পেলেন রঞ্জিত মল্লিক। তখনও তিনি বেশ আনকোরা। আগেভাগেই জানতেন ছবিতে উত্তম কুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় তাঁর দাদা-বৌদির ভূমিকায় অভিনয় করবেন। সেই কারণে বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে নিজের মুখেই জানিয়েছেন, “আমার তো হাত-পা ঠান্ডা! হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুণ। আমি নতুন! এঁদের সামনে কী অভিনয় করব?”
তিনি আরও জানান, “তত দিনে আমি দু’জনেরই কাজ দেখে ফেলেছি। সেগুলি একে একে যত মনে পড়ছে, তত যেন আমি হারিয়ে যাচ্ছি। সাবিত্রীদি এক দিক থেকে অনেক এগিয়ে। এছাড়াও, মঞ্চে তিনি একজন বেশ সফল অভিনেত্রী। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, দাপুটে অভিনেত্রী মনের দিক থেকে তিনি খুব ভালো মানুষ। আমি যে নতুন এটা একবারও বুঝতে দেননি। এবং তিনি যে ভয়ঙ্কর ভাবে অভিনয়ে বাঁচেন তাও তিনি বুঝতে দেননি। ফলত, আস্তে আস্তে একে অপরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করলাম। ওঁদের সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে আমারও সার্বিক ভাবে উন্নতি হতে থাকল। আরও একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম- না অনুরোধ করলে যেচে কখনও অভিনয় নিয়ে পরামর্শ দিত না তাঁরা।”
প্রসঙ্গত, উত্তম-সাবিত্রী জুটি চিরকালই মন কেড়েছে বাঙালি দর্শকদের। তবে রুপোলী পর্দার বাইরে বেরিয়েও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে সকলেই একটা অন্য রকম ভালোবাসার সুগন্ধ পেত। আর এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন খোদ রঞ্জিত মল্লিক।
এদিন তিনি বলেন, “মৌচাকের পরে আরও একটি দু’টি ছবিতে কাজ করেছি আমরা। তখনই শুনেছিলাম সাবিত্রীদি নাকি দারুন রাঁধে। উত্তমকুমার সহ অনেককেই নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। তবে আমারই দুর্ভাগ্য সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি বঞ্চিত। কোনও দিন ওঁর হাতের রান্না খাওয়া হল না। তবে প্রথম ছবির সুবাদে চোখ ভরে দেখেছি উত্তম-সাবিত্রীর জুটি। এক কথায় যদি বলি অনবদ্য। অনেক সাক্ষাৎকারেও পড়েছিলাম, উত্তমকুমারের নাকি সাবিত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে অভিনয় করতে অস্বস্তি হত। এই বিষয়ে আবার অনেকের ধারণা একে অপরকে চোখে হারাতেন তাঁরা। তবে সেটে এটা খেয়াল করেছি, একে অপরের প্রচন্ড খেয়াল রাখতেন দু’জনে। হয় তো এটাই তাঁদের ভালোবাসা।”