ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর ধরে আমাদের দেশ ভারতবর্ষের ওপর একচেটিয়া শাসন চালিয়েছে। এ সময় আসমুদ্র হিমাচল গোটা দেশবাসীর দিন কেটেছে এক অন্ধকার বিভীষিকাময় জীবনের মধ্যে দিয়ে। অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে। সেসময় আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন মহান তথা প্রগতিশীল ব্যক্তিরা ছিলেন একমাত্র তারাই পেরেছিলেন অত্যাচারিত ব্রিটিশ শাসকদের (British Ruler) উচিত শিক্ষা দিতে।
যার কাহিনী আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। এমনই এক দারুন অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী রয়েছে বাংলার (Bengal) অত্যন্ত সাহসী তথা আধুনিক চিন্তা ভাবনার অধিকারী রানি রাসমণিরও (Rani Rashmoni)। তিনি হলেন সেই বিনয়ী মহিলা যার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছিল দুর্দণ্ড প্রতাপ ব্রিটিশ সাহেবরাও। বাংলার বাসিন্দা রানি রাসমণির ১৭৯৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছিল তৎকালীন নীচু জাতের ঘরে। প্রসঙ্গত যে সময়কার কথা হচ্ছে সেসময় আমাদের সমাজে বিশেষ করে গোটা বাংলায় জাতপাত নিয়ে ব্যাপক ছুৎমার্গ ছিল।
তেমনই নীচু জাতের পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে তৎকালীন সমাজে রানি রাসমণি এবং তার গোটা পরিবারকে কখনও সম্মানের চোখে দেখা হয়নি। জানা যায় মাত্র সাত বছর বয়সেই,রাসমণির বাবা-মায়ের ছায়া তার মাথার ওপর থেকে সরে যায়।এরপর মাত্র ১১ বছর বয়সেই জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। রাসমণি ছিলেন রাজচন্দ্রের তৃতীয় স্ত্রী এবং তিনি তার চেয়ে বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন। এই কারণেই তিনি অল্প বয়সে বিধবা হয়েছিলেন। ছোট সম্প্রদায়ের মেয়ে হলেও রানির বুদ্ধি ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। তাই রাজচন্দ্র দাস তাকে ব্যবসার কাজে নিযুক্ত করেছিলেন।
কথিত আছে ১৮৪০ সাল নাগাদ ব্রিটিশরা বাংলায় একটি নতুন নিয়ম চালু করেছিল। সেই নিয়ম অনুযায়ী যে জেলেরা হুগলি নদীতে মাছ ধরতে আসবেন, তাদের কর দিতে হবে। এমনিতেই অসহায় জেলেরা অত্যন্ত দারিদ্র্যতার মধ্যে দিয়েই জীবন কাটাতেন। তার ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা। ব্রিটিশদের দাবি ছিল জেলেদের মাছ ধরার কারণে স্টিমার আসতে সমস্যা হয়। এজন্য তাদের কর দিতে হবে।
এরপর ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের কথা জানাতে অসহায় জেলেরা রানি রাসমণির কাছে পৌঁছান। এরপর ব্রিটিশ সরকার রানীর সাথে চুক্তি করেছিল, কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে স্টিমার চলাচলে তখনও সমস্যা হবে। পরে সমস্যা হয়েওছিল,তখন সাহেবরা রাণীমার কাছে উত্তর চাইলে তিনি তার সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়ে নিমেষে সকলের মুখ বন্ধ করে দেন। এরপর ব্রিটিশরা জেলেদের আর কোন ক্ষতি করতে পারেনি এবং তারা বুঝতে পেরেছিল যে রাণীমা এই সবটাই করেছেন গরীব জেলেদের জন্য।