রাজ্যজুড়ে জারি রয়েছে দ্বিতীয় দফার লকডাউন। বেশ অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছোট বড় অনেক দোকান পাট৷ বেসরকারি সংস্থাও। কিন্তু চারিদিকে লকডাউন হলেও খিদের তো আর লকডাউন হয়না। কারোর ঘর বন্দী থেকে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে, কারোর আবার ফুচকা বেচেই পেটের ভাত হয় তাই বন্দীদশায় ফুচকা ডেলিভারি করতে হচ্ছে।
হ্যাঁ ঠিক এভাবেই বাড়ি বাড়ি ফুচকা ডেলিভারি দিয়ে পেট চালাচ্ছেন ব্যারাকপুরের রাজেশ দেবনাথ। রাজেশের বাবা সমীর দেবনাথ ফুচকা বেচেই সংসার চালিয়েছেন। সে ছিল ভয়ংকর কষ্ট এবং আর্থিক অনটনের দিননামচা। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন, তাকে যে কষ্ট করতে হয়েছে সেই কষ্ট যেন তার ছেলে দুটোকে না করতে হয়। তাই অতি কষ্ট করেও দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন সমীর বাবু।
কোচিং সেন্টারের মক টেস্টে খুব আশা জাগাল মাধ্যমিকে 66 শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে 70 শতাংশ এবং কলা বিভাগে গ্র্যাজুয়েশনে 52 শতাংশ নম্বর পাওয়া রাজেশ, ইছাপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজে ঢুকেছিলেন। কিন্তু লকডাউনে সে চাকরি খোয়ান তিনি। অবশেষে বাবার ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাজেশ।
পরিবারের অভাব মেটাতে রাজেশ ফুচকা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন সকলে দুয়ারে দুয়ারে। টক জল ফুচকা, দই ফুচকা, চাটনি ফুচকা, চিকেন ফুচকা কি নেই তার ঝুলিতে? ফোনে অর্ডার পেলেই বেরিয়ে পড়ছেন ফুচকার প্যাকেট হাতে। গোটা পলতা ও ব্যারাকপুর জুড়ে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর এই হোম ডেলিভারির ফুচকা।
সকাল জুড়ে টিউশনি পড়ানো আর সন্ধ্যে থেকে ফুচকার ব্যবসা। লোকলজ্জা এড়িয়ে ফুচকা বিক্রেতা বাবার পাশে এক যোগ্য সন্তানের মতো দাঁড়িয়েছেন তিনি। আর সব কাজের শেষে এখনো উলটে পালটে দেখছেন সরকারী চাকরির পড়াশোনা। রাজেশের কথায়, “কোনো কাজই ছোট নয়। লোকমুখের কথাকে আমি গুরুত্ব দিই না। হেরে যেতে নয় আমি দৌড়াতে এসেছি।”