সারা বিশ্বের দরবারে পশ্চিমবাংলা যেসমস্ত কারণের জন্য গর্ব বোধ করে, তার মধ্যে অন্যতম দুটি নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) এবং সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। বাংলার মাটিতে এই দুই প্রাণপুরুষের বেড়ে ওঠা, সৃষ্টি, ভাবনা আজীবনের সম্পদ হয়ে রয়ে গিয়েছে৷ এই দুই অপার জ্ঞানের ভান্ডার আর কখনো তৈরি হবে কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
দুজনের যুগ আলাদা হলেও। সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি নিয়ে যেকটি কাজই সত্যজিৎ করেছেন সবই হয়েছে সেরা। পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদেই রবি ঠাকুরের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষরা থাকতেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে। সেখান থেকে তারা উত্তর কলকাতায় এসে থাকতে শুরু করেন।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে উপেন্দ্রকিশোর রায়ের বেশ দহরম মহরম ছিল। সত্যজিতের পিতা সুকুমার রায়ের লেখারও ভূয়সী প্রশংসা করতেন রবি ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ৬০, তখন জন্ম হয় সত্যজিতের। রবিঠাকুরের সঙ্গে তার প্রথম দেখা শান্তিনিকেতনেই।
মাত্র ১০ বছর বয়সে মা সুপ্রভা রায়ের হাত ধরেই রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ। অটোগ্রাফ নেবেন বলে সাথে করে একটি খাতাও নিয়ে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ। অটোগ্রাফের বদলে সেই খাতায় ৮ লাইনের এই কবিতাটি লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।
এরপর ১৬ বছর বয়সে শান্তিনেকতনে পড়তে যান সত্যজিৎ। রবি ঠাকুরের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি। তারপর রবি ঠাকুরের গল্প নিয়ে একের পর এক দুর্দান্ত কাজ করে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়।