বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক অতি পরিচিত নাম অভিষেক চ্যাটার্জী (Abhisekh Chatterjee)। গত দুই দশক আগেও নায়কের ভূমিকায় পর্দা কাঁপাতেন তিনি। তাঁর সাবলীল অভিনয়ের দক্ষতা এবং সুদর্শন চেহারায় মুগ্ধ হয়েছিল অসংখ্য সিনেমাপ্রেমী। নিজের কাজ দিয়েই তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তাঁর সমসাময়িক প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, তাপস পালের মত দাপুটে অভিনেতাদের। প্রয়োজনে সেই সব অভিনেতা দের সাথে একই সিনেমায় অভিনয় করতেও তিনি পিছপা হননি, কারণ তিনি তার প্রতিভা নিয়ে এতটাই আশাবাদী ছিলেন।
অভিষেক চ্যাটার্জী তাঁর অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে বেশ কিছু প্রতিভাবান অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেন। সন্ধ্যা রায়, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, তাপস পাল উৎপল দত্ত, প্রমুখ অভিনেতাদের সাথে তিনি অভিনয় করেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই তাঁর সহ অভিনেতার ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন। তবে শুধু বড় পর্দা নয় ছোট পর্দাতেও তিনি সমানভাবে সাবলীল অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছেন। তরুন মাজুমদ্র পরিচালিত সিনেমা পথভোলায় অভিনয় করে তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন। এরপর একে একে সংঘর্ষ, ফিরিয়ে দাও, দহন, বাড়িওয়ালি, মধুর মিলন , মায়ের আঁচল, আলো ,ওয়ান, নীলাচলে কিরীটি এর মতো একের পর এক অসাধার সব সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন। বর্তমানে জনপ্রিয় ধারাবাহিক খড়কুটোতে গুনগুনের বাবার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
তবে তারপর বেশ কিছুদিন ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। বড় পর্দার বদলে তিনি কামব্যাক করেন ছোট পর্দায়। এরকারণ হিসেবে অভিনেতার বক্তব্য, ‘এখনকার সিস্টেম অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রোডাকশন হাউজগুলোর নির্দিষ্ট লবি রয়েছে। তারা একটা সেট অফ আর্টিস্ট নিয়েই কাজ করে। পুরনো সময়ের বেশির ভাগ অভিনেতাই আজ ব্রাত্য।’
চাইলেই সিনেমায় কাজ করতে পারতেন অভিনেতা। কিন্তু অভিষেক চ্যাটার্জি মনে করেন, যে এতটাও বুড়ো তিনি হয়ে যাননি যে তাকে দেব বা জিতের বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। কেননা বলিউডে এখনো শাহরুখ খান, আমির খান, বা সালমান খানেরা নায়কের চরিত্রেই অভিনয় করছেন। কিন্তু তার মতে এখানে ‘তেলবাজি’টাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আরও এক বিস্ফোরক দাবী করেছিলেন অভিনেতা। ৯০ দশকের পর তার হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, তার কেরিয়ার শেষ করে দিয়েছেন সেই সময়ের জনপ্রিয় জুটি প্রসেনজিৎ – ঋতুপর্ণা।
কোনো রাখঢাক না রেখেই তিনি বলেছিলেন, “প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এরা ’৯৭-’৯৮ সালে জোট বেঁধে প্রায় ৩০-৩২টা ছবি থেকে আমাকে বাদ দিয়েছিল। সে সময়ে আমিই টলিউডে এক নম্বর। প্রায় এক বছর আমার কোনও কাজ ছিল না। বসে থেকে থেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। বছর দুয়েক পরে যাত্রায় যোগ দিলাম। তার পরই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ”
সেই সময় প্রসেনজিৎ এর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই ছিলেন বলেই মনে করেন অভিষেক। কিন্তু অভিনেতা তাকে ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুই ভাবতেন। অন্যদিকে ঋতুপর্ণার সঙ্গে একটি ভুলবোঝাবুঝির পর থেকে, তার সঙ্গে কাজ করা থামিয়ে দেন বলেই জানান অভিষেক। তবে তখন তাকে লোকের মুখে শুনতে হয়েছে, ‘অভিষেক তো ফুরিয়ে গিয়েছে’। কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস রেখে ফের তিনি ফিরে এসেছেন পর্দায়। আজও তার অভিনয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকেন দর্শকেরা।