একটা সময় গোটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে একার কাঁধেই বহন করেছেন টলিউডের (Tollywood) সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)। আর দীর্ঘ এই কয়েক দশকের অভিনয় জীবনে বারে বারে বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ভেঙেছেন সকলের প্রিয় বুম্বাদা। আর এবারের বাংলা নববর্ষে এই প্রিয় অভিনেতাকে বাঙালি পেলেন দু’দুটি বিপরীত ধর্মী চরিত্রে। একদিকে ‘শেষ পাতা’র (Sesh Pata) লেখক বাল্মিকী, তো অন্যদিকে ‘জুবিলি’র (Jubilee) প্রযোজক পরিচালক শ্রীকান্ত রায়।
যা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিদিনের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন ‘দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী চরিত্রে আমাকে দেখে বাঙালিরা আঁতকে উঠবে পয়লা বৈশাখে’। প্রসঙ্গত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মানেই বরাবরই ভিন্ন ধরনের ছক ভাঙ্গা চরিত্র। একটা সময় চুটিয়ে কমার্শিয়াল সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বুম্বাদাকে। পরবর্তীতে কিংবদন্তী পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরেই সেই ছক ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন অভিনেতা নিজেই।
পরবর্তীতে সৃজিত মুখার্জি এবং গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকদের হাত ধরে অটোগ্রাফ কিংবা মনের মানুষের মতো ভোগী আর ত্যাগী সম্পূর্ণ দুই বিপরীতধর্মী চরিত্রেও নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে ভেঙেছিলেন প্রসেনজিৎ। এপ্রসঙ্গেও সম্প্রতি একটা সিক্রেট শেয়ার করে অভিনেতা জানিয়েছেন প্রত্যেক আট থেকে দশ বছর অন্তর তিনি নিজের একটা অধ্যায়কে পাল্টান, নতুন করে চ্যালেঞ্জ নেন। আর এ বছর দীর্ঘ ১০ বছরের মাথায় সেই চ্যালেঞ্জটা হলো ওয়েব সিরিজে ডেবিউ করা।
প্রসঙ্গত ওয়েব সিরিজ এমনই একটা প্ল্যাটফর্ম যা দেখে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ। এ প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেছেন জুবিলী মুক্তির পর তিনি এরই মধ্যে দারুন সাড়া পেয়েছেন, বলিউডের চেনা পরিচিতদের তরফ থেকেও এসেছে অনেক ফোন। প্রসেনজিতের কথায় ‘জুবিলী রিলিজের পর এত কমপ্লিমেন্ট, ফোন, মেসেজ পেয়েছি কি বলবো? এটা তো সিনেমা বা সিরিয়াল নয় সিরিজ। এইখানে যে নিজেকে ফিট ইন করাতে পারলাম, আমি খুশি’।
সেই সাথে একজন বাঙালি অভিনেতা হিসেবে গর্বের সাথে অভিনেতার সংযোজন ‘বাংলা ছবি করেই তো এই সম্মান অর্জন করতে পেরেছি’। অন্যদিকে এদিন তিনি জানান শেষ পাতা সিনেমায় বাল্মিকির মত অত্যন্ত কঠিন একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙেছেন তিনি। অভিনেতার নিজের কথায়, ‘এই চরিত্রটা করতে গিয়ে আমি নিজেকে ভেঙেছি। চেহারা, হাঁটাচলা সবদিক থেকে। ওই কণ্ঠস্বর বের করে আনা খুব শক্ত ছিল’।
এই চরিত্রটা নিয়ে তিনি এতটাই খুঁতখুতে ছিলেন যে ৪০ শতাংশ ডাবিং করেও তিনি আবার পাল্টেছেন। বাল্মিকীর এই চরিত্র টার মধ্যে বারবার উঠে এসেছে ধার নেওয়া এবং তা শোধ দিতে না পারার বিষয়টা। তাই এক্ষেত্রে প্রসেনজিতের ব্যক্তিগত জীবনেরও যে ওঠাপড়া কিংবা স্ট্রাগলের বিষয়ে রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অভিনেতা বলেন ‘ঈশ্বরকে বলি, আমি যেটা দেখেছি পৃথিবীর কোন লোকের যেন এটা না হয়।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানোয় একসময় স্কুলে যেতেন যখন তখন গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতো, আর পিছনে একটা লোক দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু তারপর এমনই পরিস্থিতি তৈরী হয় যে নিজে চোখে দেখেছেন মা ব্যাগ থেকে খুচরা পয়সা বার করে কোন রকম একটা ডিম আর দুটো আলু দিয়ে ভুজিয়া করে দিয়েছেন। তাই এদিন অভিনেতা জানান ‘ওই পরিস্থি দেখেছি তাই গর্ব করে বলি ‘পৃথিবীতে সব অন্যায় হয়তো করতে পারি, কিন্তু স্বপ্নেও কারও ভাত মারতে পারব না’।
প্রসঙ্গত জুবিলী সিনেমায় নিজের স্বপ্নের একটা দৃশ্য করেছেন অভিনেতা। যা নিয়ে বলতে গিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন ‘অ্যাক্টরও না, কিন্তু নিজে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছি চল্লিশ বছর ধরে। এই ব্র্যান্ড কেউ বানিয়ে দেয় না। বানিয়ে দেন ঈশ্বর, আর আমাদের চেষ্টা, প্রযোজক, পরিচালক-অভিনেতার মিলিত চেষ্টা। এই ব্র্যান্ড বাঁচাতে তাকে নিষ্ঠুর হতে হয়। এই নিষ্ঠুরতায় কোনও পাপ নেই’। এই বয়সে এসেও প্রসেনজিৎকে দেখে আকৃষ্ট হয়েছেন তাঁর ছেলের বান্ধবীরা। সে কথা জানিয়ে এদিন প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ছেলের বান্ধবীরাও ট্রেলার দেখে বলেছে ইওর ফাদার ইজ টু হট’।