নাহ বলিউডের সুপারস্টার এই তকমা তার সাথে যায়না। আসলে নায়ক আর অভিনেতার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে যার জেরেই আলাদা করা যায় সলমান খান, শাহরুখ খানের থেকে নওয়াজউদ্দীন, মনোজ বাজপেয়ীদের। ঠিক তেমনই বড়পর্দার ব্লকবাস্টার সুপারহিট ছবির নায়ক নন পঙ্কজ ত্রিপাঠি (Pankaj Tripathi)। কিন্তু ভারতীয় ওয়েব দুনিয়ায় অন্যতম দুই মাইলস্টোন ‘স্যাক্রেড গেমস’ এবং ‘মির্জাপুর’ এর মতো দুটি জনপ্রিয় সিরিজে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা।
পর্দায় পঙ্কজ ত্রিপাঠির দৃশ্য চললে দর্শকরা ঘন্টার পর ঘন্টা একই জায়গায় বসে থাকতে পারেন। কিন্তু এই লেজেন্ডের শুরুটা মোটেই এতটা আলো ঝলমলে ছিলনা৷ হাতে চুড়ি, ঠোঁটে লিপস্টিক পরে মেয়েলী সাজেই রামলীলা ময়দানে নাচ দেখাচ্ছিল বছর ১৫ এর একটা ছেলে, তাকে দেখে হাসিতে ফেটে পড়েছিল গোটা গোপালগঞ্জ গ্রাম। নাচ শেষে হাত পেতে নিত টাকা, গুনলে দেখা যেত সেই টাকায় বাবার ওষুধটাও হবেনা।
অভিনেতার বাবা বনারস ত্রিপাঠির স্বপ্ন ছিলো ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু নিজের অসুস্থতা আর অর্থকষ্ট সেই সাধের সাধ্য হয়ে উঠতে পারেনি। বাবার অসুস্থতার সময় চাষাবাদের দায়িত্ব উঠেছিল পঙ্কজেরই কাঁধে। একসময় বহুকষ্টে উচ্চমাধ্যমিক অবধি পড়ানোর পরেই ছেলেকে হোটেলে কাজ শেখার জন্য শহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পঙ্কজের বাবা৷
কিন্তু সেই ১৫ বছরের ছেলেটা মেয়ে সাজলেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনও তো কেবল অভিনেতা হতেই চেয়েছিলেন। দুচোখ ভরা অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে মুম্বই পারি দেন পঙ্কজ। কোনো রকমে টিকে থাকার লড়াই চালাতে চালাতে একের পর এক অডিশনে তখন কেবল ব্যর্থই হচ্ছেন অভিনেতা। ২০১০ সালে অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ ছবি থেকেই পরিচয় পেতে শুরু করেন তিনি৷ এরপর একে একে নিউটন, কাগজ, গুঞ্জন সাক্সেনা, ক্রিমিনাল জাস্টিস, মির্জাপুরের মতো একাধিক সিরিজ এবং ছবিতে অন্য মাত্রার অভিনয় করেছেন পঙ্কজ।
একবার কপিল শর্মার শোতে এসে পঙ্কজ ত্রিপাঠি হোটেলে কাজ করার সময়কার একটি ঘটনা শেয়ার করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, উনি যেই হোটেলে কাজ করতেন সেখানে একবার মনোজ বাজপেয়ী আসেন। আপেল খেতে চেয়েছিলেন। অন্য একজনের নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু, পঙ্কজবাবু অনুরোধ করেন উনি নিয়ে যাবেন এবং ওনার রুম থেকে যাই অর্ডার আসুক, যেনো ওনাকেই যেতে দেওয়া হয়। নিজের ভগবানকে স্বচক্ষে দেখার, তার ক্ষণিকের সান্নিধ্য মিস করতে চাননি। যাওয়ার সময় মনোজবাবু ভুলবশত চপ্পল ফেলে যান। নিয়ম ছিল কোনো গেস্ট কিছু ভুলে গেলে অফিসে সেটা জমা করে দেওয়ার। যারা রুম পরিষ্কার করেছিল পরের দিন, তারা পঙ্কজবাবুকে বলেন, “তুমহারে উও মনোজজি আয়ে থে না? চপ্পল ছোড় গয়ে হ্যায়!” পঙ্কজবাবু বলেছিলেন, “ভাই উসকো প্লিজ জমা মত করো। উও মুঝে দে দো, ম্যায় রখলুঙ্গা!” আর এখন মনোজ বাজপেয়ীকেও পর্দায় টেক্কা দেন অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠি। আজ এই প্রতিভাবান অভিনেতার ৪৫ বছরের জন্মদিনে বংট্রেন্ডের তরফ থেকে তাকে জানানো হল একরাশ শুভেচ্ছা।