‘চারুলতা’ (Charulata) নামটা শুনলেই আজও বাঙালির চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটাই নাম,তিনি হলেন মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee)। বাংলা সিনেমা জগতের প্রথম সারির বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মধ্যে অন্যতম হলেন মাধবী। একদিকে দিয়ে দেখতে গেলে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ‘লাকি নায়িকা’ তিনি। কারণ তিনিই হলেন এমন একজন সৌভাগ্যবান শিল্পী যিনি মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো বাংলার দিকপাল পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
একটা সময় ছিল যখন মাধবী শিশুশিল্পী হয়েই মাত্র ৭ বছর বয়সেই পা রেখেছিলেন অভিনয় জগতে। জানা যায় প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম ছবি “দুই বেয়াই” দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল তার। জানা যায় অভিনেত্রীর আসল নাম মাধবী নয় মাধুরী ছিল। এ প্রসঙ্গে একবার এক সাক্ষাৎকারে মাধবী জানিয়েছিলেন পরিচালক মৃণাল সেনের ছবিতে কাজ করার সময় বিজয় চট্টোপাধ্যায় তাঁর নাম মাধুরী থেকে মাধবী করে দিয়েছিলেন। একসময় বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে মাধবী ছাড়া কোনো চরিত্রই ভাবতে পারতেন না পরিচালকরা। সেসময় দর্শকমহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) আর মাধবী মুখোপাধ্যায়ের জুটি।
পরপর তিন বছর তিনটি সফল ছবিতে কাজ করে নতুন রেকর্ড তৈরি করে ছিলেন এই জুটি। উল্লেখ্য ১৯৬৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবি থেকে শুরু করে ১৯৬৪ সালের চারুলতা এবং ১৯৬৫ সালে ‘কাপুরুষ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মাধবী । প্রথম ছবি দুটি বার্লিনে এবং পরেরটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। এরপরেই উত্তম কুমার বীপরীতে ‘নায়ক’ সিনেমার সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সুপ্রিয়া।
কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সাথে আর কাজ করবেন না। পরবর্তীতে এই চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুরকে দেখা যায়।তবে শুধু নায়ক নয় পরবর্তীতে ‘অশনি সংকেত’ আর ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে মুখের ওপর না বলে দিয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়কে। এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে না বললেও মাধবী একবার বলেছিলেন ‘এত পলিটিক্স শুরু হলো যে আমার মনে হলো ওখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই ঠিক। আমি কখনো না বলি না কিন্তু একবার না বললে আর হ্যাঁ হয় না। আমার ঘাড়টা ভীষণ শক্ত।’
প্রসঙ্গত সেসময় ইন্ডাস্ট্রিতে মাধবী মুখোপাধ্যায় আর সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ সম্পর্কের খবর চাউর হয়েছিল। এমনকি জানা যায় মাধবীর বাড়িতে সত্যজিতের যাতায়াত ছিল। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায় (Bijoya Roy) তাঁর ‘আমাদের কথা’ গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কোনও নাম না করে তাঁর স্বামীর এই সম্পর্কের রটনা নিয়ে বলেন, তাঁর স্বামী সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে নায়িকার ‘স্ট্যান্ডার্ড’ একেবারেই মেলেনা। এখানে তিনি নায়িকার নাম না উল্লেখ করলেও কারও বুঝতে বাকি থাকে আসলে তিনি কোন নায়িকার কথা বলেছেন। এমনকি সেসময় এও শোনা যায় বিজয়া দেবীর আপত্তিতেই নাকি সত্যজিৎ রায়ের ছবি থেকে বাদ পড়েছিলেন মাধবী।