যতদিন যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে জিনিসপত্রের দাম। এক কথায় বলতে গেলে খাবার সবজি থেকে পরণের জামা কাপড় সবেতেই যেন আগুন লেগে রয়েছে। এদিকে করোনার জেরে সকলেরই পকেটের হাল বেহাল হয়ে রয়েছে। সঞ্চয়ের টাকা শেষের দিকে অথচ আয় বৃদ্ধির কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার সময় থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। এরপর অনেকেই কোনো ছোট খাটো কাজে যোগ দিয়েছেন কেউ আবার ব্যবসা (Business) শুরু করেছেন।
অনেকেরই ছোট থেকে স্বপ্ন থাকে নিজের ব্যবসা হবে। স্বাধীন ভাবে নিয়ে ব্যবসা থেকে অর্জিত টাকা দিয়েই জীবনযাপন করবেন। আজ এই ধরণেরই অল্প পুঁজির কিছু ব্যবসার সন্মন্ধে বলবো। বর্তমানে এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলি শুরু করতে খুব বেশি মূলধনে বা পুঁজির প্রয়োজন পরে না। অথচ ব্যবসা শুরু করে ভালো টাকা লাভ করা যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই সমস্ত ব্যবসাগুলি :
১. কাগজের ব্যাগ তৈরী (Paper Bag Making Business)
বাজারের যে কোনো জিনিস কিনতে গেলেই তা নিয়ে যাওয়ার জন্য প্যাকেজিং এর দরকার। আর এই প্যাকেজিংএ মূলত প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়ে থাকলেও বর্তমানে মানুষ দূষণের সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। তাই পরিবেশ বান্ধব কাপড়ের ও কাগজের ব্যবহার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। এই সময় কাগজের ব্যাগের ব্যবসা শুরু করে তা দোকানদারদের বিক্রি করে ভালো টাকা উপার্জন করা যেতে পারে।
২. গুঁড়ো মশলার কারবার (Spices Business)
রান্নার জন্য মশলা লাগবেই লাগবে। আর প্রত্যেকেই নামি দামি ব্রান্ডের থেকে শুরু করে বেনামি কোনো না কোনো মশলা ব্যবহার করেন রান্নার জন্য। ব্র্যান্ডেড মশলার দাম অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি, সেখানে আনব্র্যান্ডেড মশলার দাম অনেক কম তাই চাহিদাও বেশি। আপনি যদি মশলার কাঁচামাল কিনে তা গুঁড়ো করে গুঁড়ো মশলার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে তা কিন্তু বেশ লাভজনক হতে পারে। যেমন- হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো ইত্যাদি। প্রথমে বিভিন্ন মুদিখানা দোকানে গিয়ে নিজের মশলা বিক্রি করতে হবে। এরপর বিক্রি বাড়লে আপনি নিজের নামেই ব্র্যান্ড তৈরী করে নিতে পারবেন। এতে আপনার ব্যবসার পাশাপাশি পরিচিতিও গড়ে উঠবে।
৩. মুদি খানা দোকান (Grocery store)
আপনার যদি বাড়ির সামনে জায়গা থাকে বা রাস্তার ধরে বাড়ি হয়ে থাকে তাহলে ছোটোখাটো করে একটি মুদি দোকান দিতেই পারেন। প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন চা, দুধ, কফি, বিস্কুট ইত্যাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মুদি দোকানে পাওয়া যায়। প্রথমে অল্প নিজেই দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করে তুলতে পারেন। তাছাড়া মুদির দোকানে আনুমানিক ১০-১৫ শতাংশ লাভ থাকেই।
৪. ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দোকান (Banner & Signboard Making Business)
আজকাল অনেকেই স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা পেয়ে থাকেন। এছাড়াও অনেকেই মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স করেছেন। যারা ডিটিপি কোর্স করেছেন তারা সাইনবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বানাতে পারবেন। তাহলে চাইলে আপনিও ব্যানার ও সাইনবোর্ডের ওদের নিয়ে সেটিকে প্রেস থেকে প্রিন্ট করিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এতে প্রিন্টিং খরচ বাদে বাকি টাকা পুরোটাই আপনার লাভ হিসাবে থাকবে।
৫. স্টেশনারি দ্রব্যের দোকান (Stationary Shop)
স্টেশনারি বলতে মূলত বই, খাতা, পেন, পেন্সিল ইদ্যাদি পড়াশোনার সামগ্রীকে বোঝায়। এছাড়াও যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হোক বা স্কুল কলেজে রেজিস্টার, হিসাবের খাতা ইত্যাদি লেগেই থাকে। আপনিও চাইলে অফিস, স্কুল কলেজ থেকে অর্ডার নিয়ে হোলসেল মার্কেট থেকে এই সমস্ত জিনিসপত্র এনে সাপ্লাই দিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন। তাছাড়া দোকান হলে দোকানেও বিক্রি বেশ ভালোই হয়।
৬. বই বাঁধানো (Book Binding Business)
বই যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেই কারণে অনেকেই বই বাঁধাই করে নেন। এছাড়াও অনেকেই পুরোনো বই সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাধাই করে নেন। আবার অফিস, স্কুল কলেজের দরকারি খাতাপত্রও বাধাই করার হামেশাই প্রয়োজন পরে। তাই আপনি যদি কম পুঁজিতে ব্যবসার খোঁজ করেন তাহলে বই বাঁধাইয়ের ব্যবসা একটি ভালো উপায় হতে পারে। আপনি চাইলেই যে কোনো বই বাঁধানোর দোকানে স্বল্প খরচে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৭. মোমবাতি তৈরী (Candle Making Business)
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। তবে এখনো এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে রাত হলেই অন্ধকার নেমে আসে। এই সমস্ত এলাকায় মোমবাতির চাহিদা বেশ ভালো। তাছাড়া মন্দির মসজিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সারাবছর মোমবাতির চাহিদা থাকেই। চাইলে মোমবাতি তৈরির ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। মোমবাতি তৈরিতে প্যারাফিন, মোম ও ছাঁচের প্রয়োজন হবে। এগুলি জোগাড় করে নিতে পারলেই আপনি মোমবাতির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৮. কাগজের খাম তৈরি (Paper Envelope Making Business)
অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজের জরুরি কাগজ ও চিঠি পাঠানো হয়। আর এই চিঠি পাঠানোর জন্য দরকার পরে খামের। এই সমস্ত কাগজের নানান রঙের খাম তৈরির ব্যবসা করেও ভালো টাকা আয় করা সম্ভব। তাছাড়া সারা বছরই প্রায় খামের চাহিদা থাকে।