আজকাল কমবেশি নারী-পুরুষ সকলেই ব্যস্ত। প্রত্যেকেই রুটি-রুজির তাগিদে ইঁদূর দৌড়ে সামিল। তাই লম্বা ছুটি নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আশার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ সকলের থাকেনা।
কিন্তু বাঙালি মানেই ভ্রমণ পিপাসু এবং খাদ্য রসিক। আর এই দুইয়েরই দারুণ মিশেল পেতে একদিনের ছুটিতেই বেড়িয়ে আসতে পারেন হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার ২ নম্বর মীরপাড়া লেনের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িতে। নগর জীবনের প্রবল ব্যস্ততা, যানজট আর ভিড়ের মাঝে গঙ্গাতীরের এই বাড়ি বড়ই শান্তি দেয় দর্শণার্থীদের।
১৮৭০ সালের এই বাড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাচাতো ভাই, গীরিন্দ্রনথ ঠাকুরের পুত্র, গুনেন্দ্রনথ ঠাকুর দ্বারা নির্মিত। আপন গল্প এবং ঘরোয়ার স্মৃতিচারণে অবনীন্দ্রনাথ কোন্নগর বাগানবাড়ির বর্ণনা দিয়েছেন।গুনেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুর পরে যদিও বাড়িটি এখনও টিকে আছে তবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণনা অনুসারে এটি তার বিলাসবহুল মহিমা হারিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই বাগানবাড়ির পেছনেও আছে আইনি লড়াইয়ের ইতিহাস। ২০০৭ সালে বাম আমলে বাড়িটিকে “হেরিটেজ” ঘোষণা করা হয়। তারপর বাড়িটি হাতবদল হয়ে চলে যায় লাখোটিয়াদের হাতে। বহুতল তোলার আবেদন তোলে লাখোটিয়ারা। শুরু হয় আইনি লড়াই। হেরিটেজ রক্ষায় সরব হন আশপাশের সচেতন নাগরিক। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর লাখোটিয়ারা ঐতিহ্যবাহী বাগানবাড়িটি হস্তান্তর করতে সম্মত হয়।
ধীরে ধীরে সাজিয়ে তোলা হয় অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি। বাড়ির কড়ি-বরগাগুলি রঙ করা হয়েছে। ৯ টি ঘর সংস্কার করা হয়েছে। মূল ভবনের পিছনে প্রায় ৮ কাঠা জমির উপরে ছিল হেয়ার সাহেবের সুইমিং পুলের সংস্কার করে রঙিন মাছ ও পদ্মফুলের চাষ করা হয়েছে। বাড়ির পশ্চিমদিকে রয়েছে মুক্তমঞ্চ। বাগান বাড়ির ভিতরে একটি ফিটন গাড়ি রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একসময় ঘোড়ায় টানা সেই ফিটন গাড়ি করেই কলকাতা থেকে কোন্নগরের বাগান বাড়িতে আসতেন অবনীন্দ্রনাথ। “জোড়াসাকর ধারে” বইটিতে বলা হয়েছে যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত শিল্পী হয়েছিলেন, তিনি এই বাড়িতে থাকাকালীন প্রথম ‘কুঁড়ি’ আঁকতে শিখেছিলেন।
ভবিষ্যতে এই বাগানবাড়িকে আরও ভালো করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সামনের ফাঁকা জমিতে ছাত্রাবাস, আর্ট কলেজ গড়ে তোলার কথা চলছে। বাগানবাড়ির ওপারে রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। কাছাকাছি দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠ থাকায় কর্তৃপক্ষ গঙ্গার দুপাশে এই ফার্মহাউসটিকে ঘিরে পর্যটন সার্কিট গড়ে তোলার কথা ভাবছেন।তাই সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন। কলকাতা থেকে খুব কাছে। একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসা যাবে। তাই আলাদা করে মাথা গোঁজার জন্য কোনও ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।