কথায় আছে গানের ভাষায় জাদু রয়েছে যা দিয়ে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকা যায়। আর এই গানের জাদুকেই দীর্ঘ সাত দশক ধরে নিজের সুরে অনবদ্য করে তুলেছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। কোকিলের থেকেও মিষ্টি কণ্ঠস্বর, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কোকিলকন্ঠী নামেও পরিচিত তিনি। বাংলা, হিন্দি থেকে শুরু করে একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন। প্রতিটা গানই মনে এক অবাধ প্রশান্তি এনে দেয়। আজ সঙ্গীতের জগৎ খালি করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর ইন্দোরের এক মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতাজি। তিনি যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন পরিবারের লক্ষী ছিলেন তিনি। বাবা ছিলেন দীননাথ মঙ্গেশকর, বিখ্যাত নাট্য অভিনতা ও গায়ক। তাই খুব ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছোট থেকেই টান ছিল। এরপর বড় হয়ে অজস্র গানের সুরে গোটা পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছেন।
নিজের গানের জন্য একাধিক পুরস্কার থেকে সন্মান পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন গায়িকা। এমনকি জীবিত থাকাকালীনই তাঁর নাম দেওয়া হাত পুরস্কার। গানকেই নিজের ধ্যান জ্ঞান সমস্তটা মনে করতেন তিনি। খুব ছোট থেকেই বাবার সাথে মঞ্চে উঠেছিলেন। তবে গ্ল্যামারে ভরা অভিনয় জগৎ নয় গানটাকেই বেছেছিলেন জীবনের ভালোবাসা হিসাবে।
‘মহল’ নামের ছবিতে প্রথম হিন্দি ছবির জন্য গান রেকর্ড করেন শিল্পী। তাঁর সেই গান সাত দশক পেরিয়ে আজও একইরকম জনপ্রিয় রয়ে গিয়েছে। অবশ্য গান বাদে অভিনয় করেছিলেন একসময়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু গ্ল্যামার জগৎ ভালো লাগেনি সুর সম্রাজ্ঞীর। তাই অভিনয় আর করেননি বরং গান নিয়েই কাটিয়েছেন সারাটা জীবন। আর তাঁর সুরের জাদুতে গোটা বিশ্ব মুগ্ধ।
১৯৪২ সালে মরাঠি ছবি ‘কিতী হসাল’ এর জন্য প্রথম গান রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। সেই সময় তাঁর প্রথম উপার্যন ছিল মাত্র ২৫টাকা। এরপর মুম্বাইতে প্রজেক্ট শশধর মুখোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে হাওয়া হয় লতাজিকে হিন্দি ছবিতে গানের জন্য। কিন্তু লতার মোহময়ী গলা শুনে প্রজেক্ট মশাই জানান, ‘বড্ড সরু গলা’। সেদিন তিনি বুঝতেও পারেননি, একদিন লতাজির গানের জন্য তাকে পায়ে পড়তে হতে পারে।
৫০ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত বহু সঙ্গীত শিল্পী এসেছেন এ পৃথিবীতে। তবে লতা মঙ্গেশকরের মত প্রতিভা হয়তো বা আর দেখতে পাবে মানুষ। শচীন দেববর্মণ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এমন অনেক পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন তিনি। লতাজির গাওয়া ‘অ্যায় মেরে ওয়াতেন কে লোগো’ গান আজ শিহরণ জাগিয়ে তোলে প্রতিটা ভারতবাসীর মনে। তাই সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে বংট্রেন্ডের তরফ থেকে রইল তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাঁর আত্মার চিরশান্তির প্রার্থনা।